অতিথিরা আসার আগেই সম্মেলন উদ্বোধন করায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন পণ্ড হয়েছে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা, ধাওয়া ও হাতুড়িপেটায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়কসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ঘটনাস্থল ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।
আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার জয়াগ মহাবিদ্যালয় ভবনের ভেতরে ও মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সম্মেলনস্থলে উপস্থিত পুলিশ সংঘর্ষে লিপ্ত উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করে।
সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন জয়াগ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাফিজ তানভির, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিম, ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন ওরফে বাবু ও জয়াগ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রাব্বি। এর মধ্যে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাফিজ তানভিরকে পুলিশের সামনেই হাতুড়িপেটা করা হয়েছে বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯ বছর পর আজ রোববার সকাল ১০টায় জয়াগ মহাবিদ্যালয়ের মিলনায়তনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা। আয়োজনের সমন্বয়ক ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফুয়াদ হাসান। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার রুহুল আমিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম।
নেতা-কর্মীরা জানান, একই উপজেলার অন্য ইউনিয়নের সম্মেলন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেড়-দুই ঘণ্টা পর শুরু হলেও জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করা হয় নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ সকাল ১০টার দিকে। তখনো সম্মেলনস্থলে এসে পৌঁছাননি সম্মেলনের সমন্বয়ক, প্রধান অতিথি বা বিশেষ অতিথিদের কেউই। অতিথিরা আসার আগেই সম্মেলন উদ্বোধন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাবুল।
জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অতিথিরা আসার আগেই জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলন উদ্বোধন করেন। পরে বেলা পৌনে ১১টার দিকে সম্মেলনস্থলে একে একে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার রুহুল আমিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম।
সম্মেলনস্থলে এসে নিজেদের অনুপস্থিতিতে সম্মেলন উদ্বোধন হয়ে গেছে দেখে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খন্দকার রুহুল আমিন ও জাহাঙ্গীর আলম এবং তাঁদের অনুসারীরা। একপর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল ইসলাম স্থানীয় সংসদ সদস্য ইব্রাহিমের নির্দেশে সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন জানালে সম্মেলনস্থলে হট্টগোল, চেয়ার–ছোড়াছুড়ি এবং কলেজ অডিটরিয়ামের বাইরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পরে সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হন মমিনুল ইসলাম।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমিনুল বলেন, নির্ধারিত সময়ে অতিথিরা না আসায় তাঁরা বেলা সোয়া ১১টার দিকে সম্মেলন উদ্বোধনের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে রুহুল আমিন ও জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলনস্থলে এসে তাঁদের অনুপস্থিতিতে সম্মেলন উদ্বোধন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় তাঁদের সমর্থকেরা সম্মেলনস্থলে হাতাহাতি এবং মাঠে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় লিপ্ত হন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জয়াগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন পণ্ড হওয়ার ঘটনার জের ধরে একই দিন বিকেলে একই উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর হয়নি।
সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলনে দুই পক্ষের ভেতর এক পক্ষ আসতে দেরি হয়েছে। এ সময় পতাকা উত্তোলন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে হালকা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।