মেঘনায় বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবি, একজনের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ৫

সোনারগাঁয়ের চরকিশোরগঞ্জে মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে চলছে উদ্ধার অভিযান। আজ শনিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের চরকিশোরগঞ্জে মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনায় এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এদিকে এ ঘটনায় এখনো শিশুসহ পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।

মারা যাওয়া ওই নারীর নাম সুমনা আক্তার (২৫)। তিনি গজারিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ফুলদি গ্রামের মফিজুল হকের স্ত্রী। এই দম্পতির দুই মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া (৬) ও সাফা আক্তার (৪), মফিজুলের ভাতিজি মারওয়া (৮), সুমনার ভাই সাব্বির হোসাইন (৪০) ও সাব্বিরের ছেলে রিমাদ (২) এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বিকেলে মফিজুল হক তাঁর স্ত্রী, সন্তান, স্বজনসহ ১১ জন নিয়ে ট্রলারে করে মেঘনা নদীতে ঘুরতে বের হন। ঘুরতে ঘুরতে তাঁদের ট্রলার চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় আসে। সেখান ঘোরাঘুরি শেষে ট্রলারটি সন্ধ্যার পর গজারিয়ার দিকে যাচ্ছিল। সে সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে বালু নিতে মুন্সিগঞ্জের বালুমহালের দিকে আসছিল একটি খালি বাল্কহেড। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বাল্কহেডটি ট্রলারটিকে ধাক্কা দেয়। তৎক্ষণাৎ ট্রলারটি ১১ যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পাঁচজন তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন ছয়জন।

কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মো. হাবিবুল্লা প্রথম আলোকে বলেন, আজ ভোর থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে নৌ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধার অভিযান চলছে। আজ সকালে ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে ওই নারীর লাশ ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় আরও পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের সন্ধানে কাজ চলছে।

দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা আকলিমা বেগম (৪২) বলেন, ‘ট্রলারের সবাই আমরা আত্মীয়স্বজন। সন্ধ্যায় আমরা বাড়ির দিকে ফিরে যাচ্ছিলাম, তখন ওই বাল্কহেড আমাদের ট্রলারের দিকে আসছিল। ট্রলার থেকে আমরা ইশারায় দিক ঘোরানোর জন্য বলতে থাকি। এরপরও তারা ট্রলারের ওপরে এসে উঠিয়ে দিল। আমি ডুবতে ডুবতে বেঁচে গেলাম। আমার মেয়ে সুমনা, দুই নাতনিসহ সবাই হারিয়ে গেল।’

মফিজুল হকের ভাগনে সিয়াম আহম্মেদ বলেন, এখনো তাঁর তিন মামাতো বোনসহ পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের খুঁজতে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য লোকেরা স্পিডবোটে করে নদীতে ঘুরছেন। এদিকে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হারিয়ে মফিজুল হক অচেতন অবস্থায় বাড়িতে রয়েছেন।

এদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আশপাশের সীমানা এলাকায় বেপরোয়া বাল্কহেডের ধাক্কায় বারবার ট্রলারডুবিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত দুই মাসে পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদীতে পৃথক বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলার ও নৌকা ডুবে ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। এসব ঘটনায় নিখোঁজ ছয়জন।

গত ৫ আগস্ট রাতে জেলার লৌহজং উপজেলার রসকাঠি এলাকায় পদ্মার শাখা নদী (তালতলা-গৌরগঞ্জ খালে) বাল্কহেডের ধাক্কায় বনভোজনের একটি ট্রলার ডোবে। সে ঘটনায় নারী, শিশুসহ সিরাজদিখান উপজেলার ৯ জন মারা যান। তাঁরা সবাই একে অপরের আত্মীয় ছিলেন। সে ঘটনায় সন্ধান পাওয়া যায়নি আরও এক শিশুর। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বেপরোয়া বাল্কহেডের ধাক্কায় সিরাজদিখান উপজেলার ফুলহার এলাকার ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবে মারা যান সামছুউদ্দিন ব্যাপারী নামের এক বৃদ্ধ। অধিকাংশ দুর্ঘটনা রাতের বেলায় ঘটেছে।

মুন্সিগঞ্জ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুজন হায়দার বলেন, আইন করে রাতের বেলা বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরও আইন অমান্য করে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রশাসনের দিক থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। যাঁরা বালুমহাল চালাচ্ছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত ফায়দার জন্য রাতের বেলা বাল্কহেড চালাচ্ছেন। মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছেন। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে রাতে নৌপথগুলো নিরাপদ করার দাবি জানান এই সাংস্কৃতিক কর্মীরা।