বরিশালে মহানগর ও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়ে লুটপাট ও ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক ৯ কাউন্সিলরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় সিটির সাবেক ১০ জন কাউন্সিলর উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছিলেন। আজ মঙ্গলবার এই চার সপ্তাহের জামিনের মেয়াদ শেষ হলে ওই ১০ জন সাবেক কাউন্সিলর বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। বিচারক মো. আশরাফ উদ্দিন তাঁদের মধ্যে ৯ জনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো ৯ সাবেক কাউন্সিলর হলেন সামসুদ্দোহা আবিদ, আউয়াল মোল্লা, কেফায়েদ হোসেন ওরফে রনি, খান মোহাম্মদ হোসেন, জয়নাল আবেদীন, আনোয়ার হোসেন ওরফে রয়েল, এনামুল হক ওরফে বাহার, হুমায়ূন কবির ও জিয়াউল হক ওরফে মাসুম। তবে জামিন পেয়েছেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সামজিদুল কবির ওরফে বাবু। তিনি অসুস্থ বলে আদালতের কাছে তুলে ধরেছেন তাঁর আইনজীবী।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আফজালুল করিম বলেন, ‘আমরা এ মামলায় হাজির হওয়া আসামিদের জামিনের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন। এখন আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জানান, আজ বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নগরের ১০টি ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলররা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন বাদী ও বিবাদীর আইনজীবীরা। শুনানি শেষে বিচারক ৯ কাউন্সিলরের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
আবুল কালাম আজাদ আরও জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। এ মামলার প্রধান আসামি সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাতসহ ১৬ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট নগরের সদর রোডে বিএনপির জেলা ও মহানগর কার্যালয়ের অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত ২৩ আগস্ট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান বাদী হয়ে ৩৮১ জনের নাম উল্লেখ এবং ৮০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সদ্য সাবেক সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ এবং সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর।
এর মধ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারা থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে তাঁকে বরিশালের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ছাড়া এ মামলার আরেক আসামি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন সেরনিয়াবাতকে রাজধানীর একটি শপিং মল থেকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে বরিশাল মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করলে বিচারক তাঁর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, সাদিক আবদুল্লাহ ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গির আত্মগোপনে রয়েছেন।