চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হচ্ছে ১৪ নভেম্বর। ওই দিন থেকে নগরের পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
একই দিন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়িত দুটি সড়ক প্রকল্পেরও উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বাকলিয়া সংযোগ সড়ক এবং বায়েজিদ-ভাটিয়ারী সংযোগ সড়ক। এই দুটি সড়কে ইতিমধ্যে যান চলাচল শুরু হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা।
প্রকল্পগুলোর কারণে চট্টগ্রাম নগরের যানজট নিরসনসহ যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক দ্রুত ও সহজ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর কর্মকর্তারা। সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ প্রথম আলোকে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ৩টি প্রকল্প ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। নতুন দুটি সড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর ফলে মানুষ আগের তুলনায় অনেক কম সময়ে গন্তব্যে যাতায়াত করতে হবে। নগরের যানজটও অনেকাংশে দূর হবে।
সিডিএ সূত্র জানায়, নগরের পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অবশ্য ২০১৭ সালে অনুমোদনের সময় প্রকল্প ব্যয় ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। অনুমোদনের প্রায় দুই বছর পর ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
এখন প্রাথমিকভাবে পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত অংশ চালু হবে। আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা-নামার জন্য ১৪টি র্যাম্প থাকার কথা থাকলেও তা এখনই চালু হচ্ছে না। সম্প্রতি এগুলোর জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছে। টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশের কাজ বাকি রয়েছে। অর্থাৎ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুরোপুরি সুফল এখনই পাওয়া যাবে না। মূলত চট্টগ্রামের মূল শহর থেকে বিমানবন্দরে যাতায়াত দ্রুত ও নির্বিঘ্ন করার জন্য এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ভাটিয়ারি পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৫৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে অনুমোদিত এই প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো শেষ হয়নি। তবে নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও ২০১৯ সালের পর থেকে নতুন এই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সড়ক ব্যবহারকারী গাড়ি থেকে টোল আদায় করা হবে। টোলহার চূড়ান্ত করা হলেও কবে থেকে তা কার্যকর করা হবে, তা ঠিক করা হয়নি।
নগরের নতুন আরেকটি সড়ক হচ্ছে বাকলিয়া সংযোগ সড়ক। বাকলিয়া সংযোগ সড়ক নগরের সিরাজউদ্দৌলা সড়ক এবং শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ককে যুক্ত করেছে। এই সড়ক নগরের চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশনের পাশ থেকে শুরু হয়ে কালামিয়া বাজারে গিয়ে শেষ হয়েছে। বৃহত্তর বাকলিয়ার ডিসি সড়ক, বগার বিল, মৌসুমি আবাসিক এলাকা, সৈয়দ শাহ এলাকার ওপর দিয়ে এই সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
চার লেনের সড়কটির দৈর্ঘ্য মাত্র দেড় কিলোমিটার। এটি নির্মাণ করতে সাত বছর সময় লেগেছে সিডিএর। যদিও তিন বছরেই কাজ শেষ করার কথা ছিল। ‘বাকলিয়া সংযোগ সড়ক’ নামে পরিচিত নতুন সড়কটি করতে ২০৫ কোটি টাকার পরিবর্তে ২১৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘সিরাজউদ্দৌলা সড়ক থেকে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। সময় দেওয়া হয়েছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত।
অনুমোদনের ১৪ মাস পর ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর সড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবদুচ ছালাম বলেছিলেন, নগরের বাকলিয়া সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। এই সড়ক নির্মিত হলে বাকলিয়ার মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে নগরে আসতে পারবেন এবং দুর্ভোগ কমে যাবে। কিন্তু দায়িত্বে থাকার সময় আর সড়কটির কাজ শেষ করে যেতে পারেননি আবদুচ ছালাম।