উপহারের গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে গরিব রোগীদের সেবায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখতে চান বগুড়ার দুটি আসনের উপনির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। আগামীকাল শনিবার ঢাকা থেকে উপহারের গাড়িটি বগুড়ার ওয়ার্কশপে এনে অ্যাম্বুলেন্স বানানোর কাজ শুরু হবে।
আজ শুক্রবার হিরো আলম প্রথম আলোকে বলেন, উপহারের গাড়ির ফিটনেস নেই। করও বকেয়া। কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে হবে। শনিবার গাড়িটি সরাসরি বগুড়ায় ওয়ার্কশপে নেবেন। এরপর বিআরটিএর সঙ্গে যোগাযোগ করে গাড়ির কাগজপত্র ঠিকঠাক করবেন। দ্রুত গাড়িটি অ্যাম্বুলেন্স বানানোর কাজ শুরু হবে। এরপর গাড়িটি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে রাখা হবে।
হিরো আলম বলেন, অনেক মুমূর্ষু রোগী টাকার অভাবে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া বহন করতে পারেন না। অসুস্থ হলে জরুরি হাসপাতালে নিতেও সমস্যা হয়। প্রসব বেদনা উঠলে অনেক গর্ভবতী নারীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। অর্থের অভাবে অনেক সময় হাসপাতালের বারান্দায়, মর্গে লাশ পড়ে থাকে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ পাঠাতেও সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ অর্থাভাবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হন। উপহারের গাড়িটি অ্যাম্বুলেন্স বানানোর পর গরিব রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে।
গাড়িটির কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, নোয়াহ ১৯৯৮ মডেলের গাড়িটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই। ২০১৩ সালের ১৮ মার্চের পর থেকে ওই গাড়ির কর বকেয়া আছে। বর্তমানে ওই গাড়ির বিপরীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পাওনা প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।
হিরো আলম বলেন, অ্যাম্বুলেন্স সেবার ক্ষেত্রে বগুড়া সদর এবং কাহালু-নন্দীগ্রাম উপজেলার মানুষ অগ্রাধিকার পাবেন। তবে অন্য এলাকার দরিদ্র রোগীদেরও বিনা মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দেওয়া হবে। হিরো আলম ফাউন্ডেশন থেকে অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও তাঁর সহকারীর বেতন-ভাতা এবং জ্বালানি সরবরাহ করা হবে।
হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দেওয়া এম মখলিছুর রহমান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের হাজি আবদুল জব্বার জিএল একাডেমি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। বগুড়ায় উপনির্বাচনের এক দিন আগে ৩১ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভে এসে হিরো আলমকে নিজের ব্যবহৃত নোয়াহ মাইক্রোবাসটি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন এম মখলিছুর রহমান। উপহারের গাড়ি নিতে গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জে যান হিরো আলম।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা আছে কি না, জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারার মতো স্বচ্ছ পরিবেশ, কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসিটিভি, ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট গ্রহণ, সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ভোটে গিয়ে কোনো লাভ নেই। নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে এলে এলাকার জনগণের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (একতারা প্রতীক) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হিরো আলম। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনে ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এরপর হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোটের ফলাফলে কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রভিত্তিক ইভিএমের ভোটের প্রিন্ট কপি ও ৪৫টি কেন্দ্রের ভোট পুনর্গণনা চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদনও করেন তিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর সেই আবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেন। নির্বাচন কমিশনে ন্যায়বিচার না পেলে তিনি ফলাফলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করবেন বলে জানান তিনি।