সিলেটে কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। অবশ্য কোনো নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। এদিকে বর্ষা শুরু হলেও নেত্রকোনার হাওরগুলোতে এখনো পানির দেখা নেই।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে টানা কয়েক দিন ধরে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় সেখানে পানি বিপৎসীমার দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে গত বৃহস্পতিবার সকালে ১০ দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর সিলেট পয়েন্টে বৃহস্পতিবার ৮ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও গতকাল সকালে ৯ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১০টি উপজেলায় মোট ৬৮টি হাওর আছে। নদ-নদী ও খাল-বিলের সংখ্যা ১৮৮। সব মিলে জলাশয়ের আয়তন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৫ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরের আয়তন ৫৬ হাজার ৬৭৬ হেক্টর।
অন্যান্য বছর বৈশাখ মাস থেকে হাওরজুড়ে পানি থাকে। কিন্তু আষাঢ় মাস এলেও এবার বৃষ্টির দেখা নেই, হাওরে পানি নেই। এর আগে কোনো বছর এমন পানিশূন্য হাওর তিনি দেখেননি।রহমত আলী তালুকদার, হাওর এলাকার বাসিন্দা
পাউবো সূত্র আরও জানায়, কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার। গতকাল সকালে সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ৯ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটারে। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে ৮ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। নদীর শেরপুর পয়েন্টে ৫ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পিয়াইন নদের জাফলং পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সকালে ১০ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও গতকাল সকালে তা ১০ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। সেখানে গতকাল সকালে ১১ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে ১০ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১৩৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ২২ মিলিমিটার এবং সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেটে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
এবার পানি না থাকায় মাছের প্রজনন হচ্ছে না। মা মাছ ধরা পড়ছে। মিঠাপানির এসব মাছ, শামুকসহ জলজ প্রাণী অস্তিত্বসংকটে পড়বে। খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহফুজুল হক
হাওরের এমন চিত্র আগে দেখেননি নেত্রকোনার মানুষ বর্ষা শুরু হলেও নেত্রকোনার হাওরগুলো পানিশূন্য। নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার পুরানহাটি এলাকার বাসিন্দা রহমত আলী তালুকদার (৮১) বলেন, অন্যান্য বছর বৈশাখ মাস থেকে হাওরজুড়ে পানি থাকে। কিন্তু আষাঢ় মাস এলেও এবার বৃষ্টির দেখা নেই, হাওরে পানি নেই। এর আগে কোনো বছর এমন পানিশূন্য হাওর তিনি দেখেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১০টি উপজেলায় মোট ৬৮টি হাওর আছে। নদ-নদী ও খাল-বিলের সংখ্যা ১৮৮। সব মিলে জলাশয়ের আয়তন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩১৫ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরের আয়তন ৫৬ হাজার ৬৭৬ হেক্টর।
খালিয়াজুরীর খলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় হাওর–গবেষক সঞ্জয় সরকার বলেন, এ বছর হাওরে পানি আসতে দেরি হওয়ায় মৎস্যজীবীরা যেমন বিপাকে, তেমনি হাওরের মৌসুমি মাঝিমাল্লারাও।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহফুজুল হক। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এবার পানি না থাকায় মাছের প্রজনন হচ্ছে না। মা মাছ ধরা পড়ছে। মিঠাপানির এসব মাছ, শামুকসহ জলজ প্রাণী অস্তিত্বসংকটে পড়বে। খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে।