দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার কাউগাঁ এলাকায় আত্রাই নদের ওপর সেতু না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ৩০ হাজার মানুষ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা একটি পরিত্যক্ত রেলসেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এই সেতু থেকে পড়ে গিয়ে কয়েকজন নিহতও হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আত্রাই নদের ওপর প্রায় ১৮০ মিটার পরিত্যক্ত একটি রেলসেতু। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ইতিমধ্যে পাশেই নতুন একটি রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নদের দুই পারের মানুষ পুরোনো পরিত্যক্ত সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করছেন। শহরের কাছাকাছি হওয়ায় সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হচ্ছেন।
স্থানীয় মানুষেরা বলছেন, ১০০ বছরের অধিক সময় ধরে এই রেলসেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন তাঁরা। রেলসেতুর সঙ্গে লাগোয়া একটি সাধারণ সেতু করার জন্য একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। আশ্বাস পেয়েছেন, কিন্তু সেতু নির্মাণ হয়নি। কাউগাঁ মালার মোড় থেকে দিনাজপুর শহর মাত্র সাত কিলোমিটার। অথচ ওই এলাকার মানুষকে চিকিৎসা কিংবা জরুরি প্রয়োজনে প্রায় ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে শহরে আসতে হয়। ফলে সময় বাঁচাতে পরিত্যক্ত রেলসেতুটিই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের।
কাউগাঁ এলাকায় দিনাজপুর সদর উপজেলা ও চিরিরবন্দর উপজেলাকে বিভক্ত করেছে আত্রাই নদ। নদের ওপর দিয়ে গেছে দিনাজপুর-ঢাকা রেলপথ। নদের উভয় পারে বড়গ্রাম, বড়বাউল, গলাহার, ভাদরা, মুন্সিপাড়া, বাবুর বাজার, নানিয়াটিকর, রামদেবপুর, গালতর, আরজি গলাহার, ঢাকাইয়াপাড়া গ্রামে প্রায় ৫০ হাজার লোকের বাস। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। ফলে শুধু মানুষ চলাচলই নয়, উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে এনে বিক্রির বিষয়েও ভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা।
গত সোমবার সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ১৮০ মিটার রেলসেতু। সদর উপজেলার মোহনপুর ও চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতারা এলাকায় রাবার ড্যাম নির্মাণের কারণে আত্রাইয়ে পানিও কম নয়। পানি থেকে সেতুর উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। রেললাইনের মাঝে স্লিপারের জায়গায় সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল ও সাইকেলের চাকা রেললাইনের ওপর রেখে ঢালাইয়ের ওপর দিয়ে হেঁটে পারাপার হচ্ছেন মানুষ।
রেলসেতুর পূর্ব পাড়ে কথা হয় নুরজাহান বেগমের সঙ্গে। তিনিসহ ৪ জন শহর থেকে ফিরছেন। তাঁরা জানালেন, বাবুর বাজার এলাকায় তাঁদের বাড়ি। গতকাল বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এসে সেতু পার হয়েছেন।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আজিজুল হক বলেন, অনেক বছর ধরে একটি সেতুর জন্য অপেক্ষা করছেন এই এলাকার মানুষ। রেলসেতুটির ওপর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। কয়েকজনের মারা যাওয়ার ঘটনাও আছে। সর্বশেষ মাস চারেক আগে মোটরসাইকেল রেললাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে নিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে দুজনের মৃত্যুও হয়েছে। এখানে সেতু না থাকায় জরুরি কোনো রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া যায় না । হাসপাতালে নিতে হলে পাঁচবাড়ি কিংবা খুনিয়ারদীঘি হয়ে কমপক্ষে ১২ কিলোমিটার বেশি রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। অথচ মালার মোড় থেকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মাত্র ৬ কিলোমিটার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গলাহার এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘বছরখানেক আগে পঞ্চগড়ে মেয়ের বিয়ের আলাপ প্রায় ঠিক হলো। পরে ছেলেপক্ষ আমাদের বাড়িতে আসার রাস্তা ভালো নয় দেখে পিছিয়ে গেল। রাস্তা ও সেতু না থাকা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে গেছে।’
ভবেশ চন্দ্র রায় (৫২) নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘চিরিরবন্দর উপজেলার সাঁইতারা এলাকায় আত্রাই নদ থেকে একটি শাখা বের হয়ে কাঁকড়া নদী নাম ধারণ করে সদর উপজেলার মোহনপুর একালায় রাবার ড্যামের সঙ্গে পুনরায় আত্রায় নদে মিশেছে। মূলত এই এলাকা একটি দ্বীপের মতো। সেতু না থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই আমাদের।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে দিনাজপুরের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকার বলেন, কাউগাঁও রেলসেতু-সংলগ্ন সাধারণ সেতু নির্মাণে রেল কর্তৃপক্ষের কোনো পরিকল্পনা নেই। এ ধরনের সেতু নির্মাণে সরকারের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালন করে।
এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী মাসুদ রানা বলেন, কাউগাঁ এলাকায় রেলসেতুর সঙ্গে লাগোয়া একটি সাধারণ সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা আছে। অনুমোদন পেলে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে।