ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচন

মঞ্জুর জাতীয় পার্টির দুর্গে প্রায় দ্বিগুণ ভোটে আওয়ামী লীগের জয় 

জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ আসন থেকে সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

পৌরসভা নির্বাচন
পৌরসভা নির্বাচন

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাইজুর রশিদ জোমাদ্দার বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৯ হাজার ৬২৫ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির (জেপি) মেয়র প্রার্থী মাহিবুল হোসেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৭১ ভোট। গতকাল সোমবার ইভিএমে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

পিরোজপুর-২ (কাউখালী-ভান্ডারিয়া-ইন্দুরকানি) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বাড়ি ভান্ডারিয়া পৌরসভায়। তিনি এ আসন থেকে সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এ আসনে কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ভান্ডারিয়া উপজেলাকে বলা হয় আনোয়ার হোসেনের দুর্গ। সেই দুর্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রায় দ্বিগুণ ভোটে বিজয় স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ভান্ডারিয়া সদর ইউনিয়নকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। এর আগে ভান্ডারিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন জেপি নেতা সরোয়ার হোসেন জোমাদ্দার।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশির দশকের শুরুতে আনোয়ার হোসেন এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে রাজনীতিতে আসেন। আনোয়ার হোসেন ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করলেও তিনি কখনো ভান্ডারিয়া উপজেলায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হননি। ভান্ডারিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে একসময় দুর্বল ছিল। এক যুগ আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন আনোয়ার হোসেনের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মহিউদ্দিন মহারাজ আওয়ামী লীগে যোগদানের পর ভান্ডারিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মহিউদ্দিন মহারাজের ভাই মিরাজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হলে আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মহিউদ্দিন মহারাজ ও মিরাজুল ইসলামের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ শুরু হয়।

পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামেন মহিউদ্দিন মহারাজ। অপর দিকে আনোয়ার হোসেন চেষ্টা করেন তাঁর চাচাতো ভাই জেপি মেয়র প্রার্থী মাহিবুল হোসেনকে জয়ী করতে। তবে ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বেছে নেন। পৌর নির্বাচনে জেপির প্রার্থীর পরাজয়ের প্রভাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আনোয়ার হোসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মহিউদ্দিন মহারাজের নাম শোনা যাচ্ছে।

মেয়র পদে বিজয়ী ফাইজুর রশিদ জোমাদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, আনোয়ার হোসেন ভান্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সব সময় হয়রানি করতেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জেপির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন।

জেপি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হওয়ায় আনোয়ার হোসেন জোটের প্রার্থী হিসেবে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। এবারের পৌর ভোটের আগে তাঁর জামাতা সংসদ সদস্য ও  যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন ভান্ডারিয়ায় আসেন। এ নিয়ে শহরজুড়ে আওয়ামী লীগ ও জেপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।