বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ইজিবাইক। শুক্রবার দুপুরে পিরোজপুর সদর উপজেলার বেলতলা এলাকায়
বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ইজিবাইক। শুক্রবার দুপুরে পিরোজপুর সদর উপজেলার বেলতলা এলাকায়

পিরোজপুরে পেছন থেকে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় সাতজন নিহত

পিরোজপুরে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ছয় যাত্রীসহ মোট সাতজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার পাড়েরহাট সড়কের বেলতলা এলাকায় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় বাসের ১১ জন যাত্রী আহত হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন পিরোজপুর সদর উপজেলার উত্তর শংকরপাশা গ্রামের ইজিবাইকচালক মো. নাঈম (১৮), একই গ্রামের খায়রুল ফরাজী (২০), মানছুরা বেগম (৫০), বাদুরা গ্রামের জেসমিন বেগম (৩০), দক্ষিণ নামাজপুর গ্রামের আলমগীর মীর (২৫), ইন্দুরকানি উপজেলার গদারহাওলা গ্রামের হেমায়েত হাওলাদার (৫০) ও ভান্ডারিয়া উপজেলার পশ্চিম পশারিবুনিয়া গ্রামের মোটরসাইকেলচালক মো. স্বপন হাওলাদার (৩০)।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে পিরোজপুর থেকে যাত্রী নিয়ে চরখালী এলাকায় যাচ্ছিল ইজিবাইকটি। দুপুর ১২টার দিকে পিরোজপুর-পাড়েরহাট সড়কের বেলতলা এলাকায় পৌঁছানোর পর ইজিবাইকটি থামিয়ে একজন যাত্রীকে নামিয়ে দেয়। এ সময় ওই সড়ক দিয়ে ইন্দুরকানি উপজেলার বালিপাড়ায় যাচ্ছিল একটি যাত্রীবাহী বাস। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে দাঁড় করানো ইজিবাইকটিকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ইজিবাইকটি সড়কের পাশে একটি গাছের ওপর আছড়ে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ইজিবাইকের চালকসহ ছয়জন নিহত হন। একই সময়ে ইজিবাইকের পাশে থাকা এক মোটরসাইকেলচালক বাসচাপায় নিহত হন। দুর্ঘটনায় বাসের ১১ যাত্রী আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিহত ও আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলে ও চারজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।

ইজিবাইকের যাত্রী মো. শামসুদ্দোহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পিরোজপুর থেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য ইজিবাইকে উঠি। বেলতলা এলাকায় চালক ইজিবাইক থামিয়ে আমাকে নামিয়ে দেন। আমি ইজিবাইক থেকে নেমে সড়ক পার হয়ে ওপারে যাওয়ার পর শব্দ শুনে ফিরে দেখি, ইজিবাইকটি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। পাশেই একটি মোটরসাইকেলসহ এক ব্যক্তি পড়ে আছেন।’

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বরাত দিয়ে বেলতলা এলাকার ব্যবসায়ী মো. শামীম বলেন, ইজিবাইকটি সড়কের পাশে যাত্রী নামাচ্ছিল। তখন পাশ দিয়ে একটি মোটরসাইকেল যাচ্ছিল। এ সময় পেছন থেকে একটি বাস ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। বাসের ধাক্কায় ইজিবাইকটি একটি গাছের ওপর আছড়ে পড়ে।

দুপুরে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে লাশের সারি। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

দুর্ঘটনায় নিহত স্বপনের বাবা মোদাচ্ছের হাওলাদারের আহাজারি। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনেরা। শুক্রবার দুপুরে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে

নিহত হেমায়েত হাওলাদারের মেয়ে জেরিন আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা সকালে বাজার করার জন্য বাড়ি থেকে শহরে গিয়েছিলেন। বাজার করে ইজিবাইকে বাড়িতে ফেরার পথে তিনি মারা যান।’

স্বপন হাওলাদারের বাবা মোদাচ্ছের হাওলাদার বলেন, পিরোজপুর পৌরসভার ধুপপাশা মহল্লায় শ্বশুরবাড়ি থেকে স্বপন মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফিরছিলেন। পেছন থেকে বাস তাঁর মোটরসাইকেল চাপা দিলে মারা যান। খবর পেয়ে তিনি বাড়ি থেকে হাসপাতালে ছুটে এসে ছেলের লাশ দেখতে পান।

পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসিকুজ্জামান বলেন, নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ বাসটি আটক করেছে। তবে বাসের চালক পালিয়ে গেছেন।