টানা বৃষ্টিতে অতিরিক্ত পানির চাপে তলিয়ে গেছে বাগেরহাটের কয়েক হাজার মৎস্যঘের। গতকাল দুপুরে ফকিরহাট উপজেলার পিলজঙ্গ এলাকায়
টানা বৃষ্টিতে অতিরিক্ত পানির চাপে তলিয়ে গেছে বাগেরহাটের কয়েক হাজার মৎস্যঘের। গতকাল দুপুরে ফকিরহাট উপজেলার পিলজঙ্গ এলাকায়

বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৭ হাজারের বেশি মৎস্যঘের

নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে বাগেরহাটে ৭ হাজারের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে চাষিদের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছে জেলার মৎস্য বিভাগ।

নিম্নচাপের প্রভাবে গত শুক্রবার রাত থেকে বাগেরহাটসহ উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল সকাল পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টিতে জেলার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ ঘের ভেসে গেছে। পানিতে একাকার হয়ে গেছে খাল, নদী ও ফসলের মাঠ।

এ বিষয়ে জেলার মৎস্য বিভাগ জানায়, এবারের বৃষ্টিতে ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই উপজেলাগুলো গলদা চিংড়ি উৎপাদনের অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার চাষিরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। চাষিদের দাবি, অতিরিক্ত পানির চাপে ঘের ভেসে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার মাছ বের হয়ে গেছে।

ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা এলাকার কাজী মিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর ঘেরের পাড়ের ওপর হাঁটুপানি। নেট, কচুরিপানা ও ঘাস দিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তা–ও কত দূর ঠিকঠাক আছে জানা নেই।

মোল্লাহাট উপজেলার নুর মোহাম্মাদ আলী লিজ নিয়ে প্রায় ৬৫ বিঘা জমিতে মাছের চাষ করেছিলেন। টানা বর্ষণের কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আসলে মাছ ধরার সময় আমাদের। কিন্তু হঠাৎ দুর্যোগ আমাদের পথে বসিয়ে গেল। আমার ৩টি ঘেরের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ঘেরের পাড়ের সবজি চাষ করি। পানিতে সেগুলোও মরে যাবে।’

একই উপজেলার কাহালপুর গ্রামের নাসির মিয়া বলেন, ‘আমার দুটি ঘেরসহ আশপাশের প্রায় সবার ঘের পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। এলাকার মানুষের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।’

জেলাটির বেশির ভাগ মানুষের জীবিকার প্রধান মৎস্যঘেরে মাছ ও এর পাড়ে সবজি চাষ। ব্যাংক-এনজিও থেকে ঋণ নিয়েও অনেকে এসব চাষ করেন। কিন্তু মাছ বেরিয়ে যাওয়ায় চাষিরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

জেলাটির বেশির ভাগ মানুষের জীবিকার প্রধান মৎস্যঘেরে মাছ ও এর পাড়ে সবজি চাষ। ব্যাংক-এনজিও থেকে ঋণ নিয়েও অনেকে এসব চাষ করেন। কিন্তু মাছ বেরিয়ে যাওয়ায় চাষিরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বলে জানান চিতলমারী উপজেলা সদরের মুমিনুল হক টুলু।

এবারের টানা বৃষ্টিতে ঘেরপাড়ের সবজি, আমনের বীজ, রোপা আমনসহ শীতকালীন অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

এদিকে ঘের ভেসে যাওয়ায় নদী–খালে মিলছে প্রচুর চাষের মাছ। বিভিন্ন এলাকায় খেওলা জাল দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভেসে যাওয়া মাছ ধরতে দেখা গেছে। প্রতিটি জালেই ধরা পড়ছে চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রকারের চাষের মাছ।
ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা-বটতলা এলাকায় মাছ ধরছিলেন মহিদুল নামের এক যুবক। তিনি বলেন, ‘আমার নিজেরও একটা ছোট ঘের আছে। সব তলায়ে গেছে। মাঠের সব ঘের এখন একাকার। সবাই জাল নিয়ে আসছে, আমিও আসছি। দুই ঘণ্টায় বড়-ছোট মিলায়ে কেজি দশেক মাছ পাইছি।’

প্রায় প্রতিবছরই বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ঘেরের মাছ ভেসে যায়। আবার শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে মাছ মারা যায়। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচতে ঘেরের গভীরতা ও পাড়ের উচ্চতা বৃদ্ধির করতে হবে। বৃষ্টির পানি নেমে গেল চুন প্রয়োগ করে পরিমাণমতো খাবার দেওয়া প্রয়োজন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল

এবারের বৃষ্টিতে (সোমবার সকাল পর্যন্ত) জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে সাত হাজারের মতো চিংড়ি ও অন্য মাছের ঘের ভেসে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিবছরই বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ঘেরের মাছ ভেসে যায়। আবার শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে মাছ মারা যায়। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচতে ঘেরের গভীরতা ও পাড়ের উচ্চতা বৃদ্ধির করতে হবে। বৃষ্টির পানি নেমে গেল চুন প্রয়োগ করে পরিমাণমতো খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।