রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে গৃহবধূ সালমা আক্তার (৩৩) হত্যার কথা স্বীকার করে গ্রেপ্তার আরিফ শেখ (৩৬) আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঝগড়ার প্রতিশোধ নিতে তিনি একাই গলা টিপে শ্বাসরোধে সালমাকে হত্যা করেন বলে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতকে জানিয়েছেন। গতকাল রাতেই রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভীন নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তার আরিফ শেখ বালিয়াকান্দির ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আলাউদ্দিন শেখের ছেলে। নিহত গৃহবধূ সালমার প্রতিবেশী তিনি। হত্যাকাণ্ডের পর এলাকা থেকে পালিয়ে সাভারে এসে ছিলেন। সেখানে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে আত্মগোপনে ছিলেন। গতকাল ভোরে ঢাকার সাভার থানাধীন গেন্ডা এলাকা থেকে পুলিশ আরিফকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানায়, নিহত গৃহবধূ সালমা গোবিন্দপুর গ্রামের সৈয়দ আলী মণ্ডলের মেয়ে। ২০০৭ সালে একই গ্রামের ইসলাম সরদারের ছেলে আকামুদ্দিন সরদারের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ২০২১ সালে পারিবারিক কলহের জের ধরে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হলে দুই সন্তান নিয়ে সালমা পৃথক বাস করতেন। গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় সালমা বাবার বাড়ি গিয়ে ফিরে না আসায় মাকে খুঁজতে সন্তানেরা নানাবাড়ি যায়। সেখানেও না পাওয়ায় নানা সৈয়দ আলী নাতিদের নিয়ে মেয়ের খোঁজ করতে থাকেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে গ্রামের একটি লেবুবাগানের সামনে সালমার স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন। পরে দেখেন, বাগানের একটি লেবুগাছের ডালে গলায় ওড়না প্যাঁচানো সালমার মরদেহ পড়ে আছে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পুলিশ বুঝতে পারে এটি হত্যাকাণ্ড। ২ নভেম্বর সালমার বাবা সৈয়দ আলী মণ্ডল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
গ্রেপ্তার আরিফ শেখের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মোছা. শামীমা পারভীন গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্লুলেস এই হত্যার পর বালিয়াকান্দি থানা-পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক দল নিবিড় তদন্ত শুরু করে। প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন মাদকসেবীকে সন্দেহ করা হলেও তাঁদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। গৃহবধূর প্রতিবেশী আরিফ শেখ এলাকায় ছাগলচোর হিসেবে চিহ্নিত। ঘটনার পরদিন থেকে পলাতক থাকায় সন্দেহের তির তাঁর দিকে যায়। মুঠোফোন না পাওয়ায় তাঁকে শনাক্ত করতে অনেক কষ্ট হয়। পরে জানা যায়, তিনি সাভারে রাজমিস্ত্রি কাজ করছেন। প্রযুক্তির সহযোগিতায় শুক্রবার ভোরে গ্রেপ্তারের পর বিকেলে আদালতে পাঠালে সন্ধ্যায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আরিফ শেখ।
আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে আরিফ শেখ জানান, সালমার বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে তিনি বকাবকি করতেন। মাঝেমধ্যে তাঁর বাড়ির নলকূপে পানি আনতে গেলে বকাবকি করতেন। আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে ১ নভেম্বর সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরার পথে সালমাকে একা পেয়ে প্রাথমিকভাবে থাপ্পড় মারেন। পাল্টা তাঁকেও সালমা থাপ্পড় দিলে প্রতিশোধ নিতে সালমার গলা চেপে শ্বাসরোধ করেন। পরে দেখতে পান তিনি মারা গেছেন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সালমার পরনের ওড়না দিয়ে লেবুগাছের সঙ্গে পেঁচিয়ে রেখে পালিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজিব, ডিআইও-১ বিপ্লব দত্ত চৌধুরী, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।