এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
দেশে আমনের ভরা মৌসুমেও চট্টগ্রামে বেড়েছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে আমন ধান থেকে চট্টগ্রামের চালকলগুলোতে যেসব চাল উৎপাদন হয়, সেগুলোর দাম বেড়েছে। এসব চালের মধ্যে কাটারি, জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে কেজিতে চার থেকে আট টাকা।
ব্যবসায়ী ও চালকলের মালিকেরা জানান, মৌসুম হলেও ধানের দাম বাড়তি। ফলে ধান থেকে চাল তৈরিতে খরচ পড়ছে বেশি। পরিবহন খরচ মিলিয়ে খুচরায় সরু চালের দাম ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে। মাঝারি ও মোটা চালের দামও ৬০ টাকার বেশি। বাজারে সরু ও মাঝারি চালের চাহিদা বেশি।
বর্তমানে দেশে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকেরা মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহ করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত স্থানীয় চালকলগুলোতে ধানের সরবরাহ কম বলে জানা গেছে। এদিকে চালের দাম কমাতে আমদানির অনুমতিও দিয়েছে সরকার। তবে আমদানি হলেও সরু চালের দামে প্রভাব পড়েনি।
গত শনিবার চট্টগ্রামে প্রতি কেজি কাটারি বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকা দরে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৬৫, নাজিরশাইল ৭৬, মিনিকেট আতপ ৬৪, মিনিকেট সেদ্ধ ৫৭, স্বর্ণা ৫৩ ও গুটি স্বর্ণা ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে গতকাল শুক্রবার বাজারে কাটারি ৭৬, জিরাশাইল ৭৩, নাজিরশাইল ৮০, মিনিকেট আতপ ৬৮, মিনিকেট সেদ্ধ ৬১ ও স্বর্ণা ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দামে পরিবর্তন হয়নি গুটি স্বর্ণার। নগরের পাহাড়তলি বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, আমনের ভরা মৌসুমে চালের এমন দামের কারণে ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন। মূলত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ধান মজুতের কারণে ধানের সংকট দেখা দেয়। ফলে বাজারে দাম বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম নগরে চালের আড়তগুলোর মধ্যে অন্যতম পাহাড়তলি বাজার। এ ছাড়া চাক্তাই এলাকায় চালের বৃহৎ আড়ত ও চালকলগুলো রয়েছে। বহদ্দারহাট বাজারের চালের পাইকারি দোকানগুলো থেকেও নগরে চালের সরবরাহ হয়। এসব বাজারে গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চালের দাম বেড়েছে কয়েক দফায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাস থেকে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত দেশের চাল আমদানি হয়েছে ৩০ হাজার ২৩২ টন। অন্যদিকে এ বছর চট্টগ্রামে আমন থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার ২৭২ টন। এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও চট্টগ্রামে চাল আসে।
গতকাল শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব বাজারে চালের সরবরাহ হয়েছে। আমন থেকে তৈরি কাটারি, জিরাশাইল, নাজিরশাইল ও মিনিকেটের সরবরাহ বেড়েছে বাজারে। তবে দাম কমেনি। দোকানিরা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে কেজিতে এক-দুই টাকা বাড়লেও বর্তমানে পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তায় ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে।
চালের বাজার স্থিতিশীল করতে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করে আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চালকলের মালিকেরা। তাঁদের ভাষ্য, বাজারে প্রতিযোগিতা কমেছে করপোরেট কোম্পানিগুলোর কারণে। ভালো মানের ধান তাঁরা আগে থেকে সংগ্রহ করে মজুত রাখেন। ফলে স্থানীয় চালকলগুলো থেকে যে চাল বের হয় সেগুলোর চাহিদা কমে আসছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির আওতায় প্রায় ১২৬টি চালকল রয়েছে। এসব চালকলের মালিক চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান সংগ্রহ করে চাল তৈরি করেন। মিলের মালিকেরা বলছেন, বোরো মৌসুমে ধানের দাম ১ হাজার ১৫০ টাকার আশপাশে ছিল। বর্তমানে দাম গড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
প্রতি মণ ধানের কেবল ৬৭ শতাংশ চাল হয়। বাকি অংশ কুঁড়া। এর পাশাপাশি যোগ হয় পরিবহন খরচ। মিল থেকে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৭ টাকা। অন্যদিকে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা। আগে মোটা চাল ৪২ ও সরু চাল ৫৭ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতো।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, করপোরেট কোম্পানিগুলোর কারণে বাজারে প্রতিযোগিতা কমেছে। মিলের মালিকেরা ধান পাচ্ছেন না। ফলে চালের দামে প্রভাব পড়ছে। বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।