দুই দফা দাবিতে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি কর্মসূচি চলছে। এতে তৃতীয় দিনের মতো শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। শিক্ষকদের এই কর্মসূচির কারণে তাঁরা সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অভিন্ন নীতিমালা নির্দেশিকাটি হুবহু গ্রহণ করার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও রিজেন্ট বোর্ডে তা অনুমোদন করেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে আইসিটি পার্ক স্থাপনে তীব্র আপত্তি শিক্ষকদের।
মঙ্গলবার বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আবু সালেহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অভিন্ন নীতিমালা নির্দেশিকাটি হুবহু গ্রহণ করার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও রিজেন্ট বোর্ডে তা অনুমোদন করেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে আইসিটি পার্ক স্থাপনে তীব্র আপত্তি শিক্ষকদের। এ পরিস্থিতিতে ইউজিসির নীতিমালা বাতিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সামান্য জমিতে আইসিটি পার্ক স্থাপন না করার দাবিতে শিক্ষকেরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
ওই বিজ্ঞপ্তি সূত্রে আরও জানা গেছে, ইউজিসি অভিন্ন নীতিমালায় শিক্ষকদের নিয়োগ ও পদোন্নতির বিভিন্ন শর্তের অস্পষ্টতা ও অসামঞ্জস্যতা বিদ্যমান থাকায় এবং অভিন্ন নীতিমালা পর্যালোচনা কমিটির কোনো সুপারিশ গ্রহণ না করায় শিক্ষকেরা জরুরি সাধারণ সভায় নীতিমালাটি প্রত্যাখ্যান করেন। এ ছাড়া ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ একর জমিতে আইসিটি পার্ক স্থাপনে তীব্র আপত্তি জানান শিক্ষকেরা। তবে শিক্ষকেরা নতুন করে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন বৃদ্ধি করে সেখানে আইসিটি পার্ক স্থাপন করার দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দফার দাবির বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুবের সঙ্গে বৃহস্পতিবার একাডেমিক ভবনের ১১৬ নম্বর কক্ষে আলোচনায় বসেন শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। আলোচনায় উপাচার্য এই সপ্তাহের মধ্যে অর্থ কমিটি ও রিজেন্ট বোর্ডসভা করে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণে আশ্বাস দেন। কিন্তু দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা তাঁদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় হতাশা প্রকাশ করে রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সেলিম রেজা জানান, ‘আমরা ইতিমধ্যেই করোনার কারণে পিছিয়ে গিয়ে সেশনজটে আছি। চরম হতাশার মধ্যে আমাদের দিন কাটছে। বারবার একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় আমরা পড়াশোনায় ঠিকমতো মন দিতে পারছি না। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করা উচিত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবিগুলো ভিসিকে লিখিত জানিয়ে দিয়েছি। ভিসি এগুলো নিয়ে কাজ করছেন।’
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব বলেন, ‘শিক্ষকেরা কোনো নিয়মনীতি মানতে চাচ্ছেন না। এদিকে যেখানে ডিসি, এমপিসহ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন এখানে হাইটেক পার্কটা হোক, সেখানে শিক্ষকদের মধ্যে একটি মহল এ কাজে বাধা দিচ্ছে। তারপরও আমি আবার তাঁদের সঙ্গে বসব এবং রিজেন্ট বোর্ডে বিষয়টি আবার তুলব।’