চলতি বছর কটিয়াদী মোকামের সব ব্যবসায়ী নতুন ও পুরোনো পাটের মজুত নিয়ে এখন সমস্যায় আছেন।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার দিদার হোসেন পাট ব্যবসায় আছেন ২৫ বছর ধরে। এত দিন ব্যবসায় টিকে থাকতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি তাঁর। তবে এবার ব্যবসা সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। বিপাকে পড়ার কারণ মজুতের পাট বিক্রি করতে না পারা, আর অস্বাভাবিক দরপতন।
বিশেষ করে আগের বছরের মজুতের পাট নিয়ে বিপদে ছিলেন দিদার হোসেন। শেষে তাঁকে মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা কমে আগের বছরের মজুতের পাট বিক্রি করে গুদাম খালি করতে হয়েছে। এতে লাখ টাকা পুঁজি হারিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর কটিয়াদী মোকামের সব ব্যবসায়ী নতুন ও পুরোনো পাটের মজুত নিয়ে এখন সমস্যায় আছেন। বিশেষ করে সবাই পুরোনো মজুত নিয়ে বেশি ঝামেলায় আছেন। কয়েকজন আগের বছরের পাট বিক্রি করতে পারলেও কেনা দামের চেয়ে কমে বিক্রি করে পুঁজি হারিয়েছেন।
একে একে সরকারি মিল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ক্রয়কেন্দ্রগুলোর কার্যকারিতা না থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।আঙ্গুর মিয়া, সভাপতি, কটিয়াদী পাট ব্যবসায়ী সমিতি
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী দিদার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনের চলে আসা রীতি অনুযায়ী মৌসুমের শেষে পাটের বাজার ভালো থাকে। এখন মৌসুমের শেষ সময়। নতুন পাটের পাশাপাশি পুরোনো পাটেরও মূল্য ভালো পাওয়া যায়। এই আশায় প্রত্যেক ব্যবসায়ী মৌসুমে বাড়তি পাট কিনে গুদামে মজুত করে রাখেন। আমিও আগের বছর রেখেছিলাম। যে পাট তিন হাজার টাকায় কেনা, সেগুলো এখন বিক্রি করতে হয়েছে দুই হাজার টাকার কমে। আর এখন তো দাম জিজ্ঞাসার ক্রেতাই নেই।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, কিশোরগঞ্জের সবচেয়ে বড় পাটের মোকাম কটিয়াদী। ব্রিটিশ আমল থেকে এই মোকামের গোড়াপত্তন হয়। কিশোরগঞ্জের ভৈরব, পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর, বাজিতপুর, করিমগঞ্জ ও নরসিংদীর শিবপুর এলাকায় উৎপাদিত বেশির ভাগ পাট এই মোকামের মাধ্যমে বাজারজাত হয়। নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী অঞ্চলের মিলের মালিকেরা মোকামের ক্রেতা। একসময় বাজারে দেড় শতাধিক ব্যবসায়ী ছিলেন। এক যুগ আগে কমে শতকের ঘরে নেমেছে।
কয়েক বছরে ব্যবসা ছেড়েছেন অন্তত ৩০ জন। বর্তমানে ৭০ জন পেশায় টিকে থাকলেও বেশির ভাগ আবার নিয়মিত নন। কেবল মৌসুমে ব্যবসায় থাকেন। এবার মৌসুম শুরু হয় তিন হাজার টাকা মণ দরে। আড়াই মাসে এখন শ্রেণিভেদে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কমেছে। আজ বাজারে বট পাট ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বগি পাট বিক্রি হয় ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। এই মোকামে সুতি পাট নেই। অথচ গত বছর এ সময়ে সব ধরনের পাটের দাম মণপ্রতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা বেশি ছিল।
কয়েকজন ব্যবসায়ীর ভাষ্য, দামের চেয়ে এখন ক্রেতা বড় হয়ে উঠেছে। ক্রেতার দেখা পাওয়া মানে ঈদের চাঁদ পাওয়া। আবার কৃষকের কাছ থেকেও পাট কেনা প্রায় বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
পাটের অস্বাভাবিক দরপতনের কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করতে না পারা, পাটজাত পণ্যের ওপর সরকার গৃহীত কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়া, আর দিন দিন পলিথিন সহজলভ্য হয়ে পড়ায়, নতুন করে পাট চাহিদা হারায়।
কথা হয়, কটিয়াদী পাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুমার সাহার সঙ্গে।
মন্দার কারণ জানতে চাইলে তাঁর উত্তর, পাটের ব্যবহার বাড়ছে না, কমছে। ব্যবহার না বাড়লে চাহিদা সৃষ্টি হবে না। চাহিদা না থাকলে দাম পাওয়া যাবে না। আর দাম না পেলে কৃষক উৎপাদন করবেন না। উৎপাদন না হলে মোকাম থাকবে না—এটাই হিসাব। এই হিসাব মাথায় রেখে সরকারকে পরিকল্পনা করতে হবে। সব মিলিয়ে মোকামে অন্তত ৫০ হাজার মণ পাট অবিক্রীত রয়ে গেছে।
সভাপতি আঙ্গুর মিয়া জানান, একে একে সরকারি মিল বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ক্রয়কেন্দ্রগুলোর কার্যকারিতা না থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।