সদ্য প্রয়াত সাফজয়ী ফুটবলার রাজিয়া সুলতানার (২১) রেখে যাওয়া নবজাতক সন্তানকে খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে চান তাঁর স্বামী ইয়াম রহমান। আজ সোমবার সকালে নবজাতক রাজিব রহমানকে সাতক্ষীরা থেকে রাঙামাটি নিয়ে যাওয়ার আগে তিনি এই ইচ্ছার কথা জানান।
ইয়াম রহমান বলেন, তিনি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে সন্তানের নাম রেখেছেন রাজিব রহমান। রাজিয়ার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে একজন খেলোয়াড় তৈরি করার চেষ্টা করবেন। দাদির কাছে রাজিবকে রেখে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া রাজিয়ার মা, ভাই-বোন সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। রাজিয়ার মায়ের যাবতীয় খরচ তিনি বহন করবেন।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার অজপাড়াগাঁ লক্ষ্মীনাথপুর। এই গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে রাজিয়া সুলতানা সব প্রতিকূলতাকে জয় করে নারী ফুটবলে তৈরি করেছিলেন নিজের অবস্থান। কিন্তু সাফজয়ী এ ফুটবলারকে নিয়তির কাছে হেরে গিয়ে কেবল ফুটবল থেকে নয়, পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নিতে হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজিয়া স্বাভাবিকভাবে একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তান জন্ম দেন। সন্তান কান্নাকাটির পর তাকে আদরও করেছেন তিনি। ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাবার বাড়ি থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
রাজিয়ার মৃত্যুর পর চার দিন পার হয়েছে। আগে থেকে ঠিক করে রাখা হয়েছিল সোমবার সকালে দাদি রোকেয়া খাতুন ও বাবা ইয়াম রহমানের সঙ্গে নবজাতক রাজিব রহমান যাবে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে বাবার বাড়িতে। সেই মতো রাজিয়াদের বাড়ির সবাই ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়েন। আগে থেকে রাজিবকে নিয়ে যাওয়ার খবর প্রচার হওয়ায় প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনেরাও জড়ো হন। সকালে রাজিবকে নিয়ে রওনা হন বাবা ও দাদি। এ সময় রাজিবের নানি আবিরন বিবি, ফুফু সালমা খাতুনসহ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে রাজিয়ার মা আবিরন বিবি বলছিলেন, ‘আমার বাঁচা চলে গে, আমার ম্যায়ের বাঁচাটা নিয়ে যাচ্ছে। একবারও কেউ বলল না আমার ম্যায়ের বাচ্চাটা আমার কাছে রাখে যাতি। আমার মেয়ের বাচ্চা ভালো থাকবে কি মন্দ থাকবে, তা আমি আর জানতে পারনো না। আমি ইচ্ছে করলেও তাকে দেখতি পাব না।’
রাজিয়ার শাশুড়ি রোকেয়া খাতুন বলেন, তাঁর নাতিকে নানির বাড়িতে দেখার কেউ নেই। তাই তাঁর ছেলে ইয়ামের সঙ্গে পরামর্শ করে কাপ্তাইয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে তিনি তাঁর নাতিকে নিয়ে বগুড়াতে যাবেন। সেখানে এক দিন থাকার পর যাবেন ঢাকায়। তারপর তাঁদের বাড়ি কাপ্তাই নিয়ে যাবেন।