ঈদযাত্রায় আজ মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। মঙ্গলবার সকালে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে
ঈদযাত্রায় আজ মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। মঙ্গলবার সকালে পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে

পাটুরিয়ায় যাত্রীর ঢল, চাপ থাকলেও যানজট নেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে

ঈদযাত্রায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়। তাঁরা ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকাল বাসে করে পাটুরিয়া ঘাটে আসছেন। তবে ঘাট এলাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি নেই বললেই চলে। ঘাটে আসার কিছুক্ষণ পরই তাঁরা ফেরি ও লঞ্চে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথ পারাপার হচ্ছেন।

ফেরিঘাটে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসগুলোকেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। ঘাটে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই এসব বাস ফেরিতে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে।

এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জ অংশে কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। তবে মহাসড়কের কয়েকটি অংশে ধীরগতিতে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ঈদযাত্রা শুরু হলেও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল না। তবে পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ার পর গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তবে এসব যানবাহনের অধিকাংশই লোকাল বাস। এসব বাস যাত্রীদের ঘাট এলাকায় নামিয়ে দিয়ে আবার ঢাকার দিকে চলে যায়। দূরপাল্লার ফেরি পারাপারের বাসের চাপ কম থাকায় ঘাট এলাকায় ভোগান্তি নেই বললেই চলে। এবারের ঈদযাত্রায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৭টি ফেরি এবং আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে ৫টি ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ২২টি এবং আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে ১০টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। এ ছাড়া লঞ্চের পাশাপাশি আরিচা-কাজীরহাট নৌপথে ৪১টি স্পিডবোটেও যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন।

পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ার পর গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়

পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ছুটির পর আজ পাটুরিয়া লঞ্চঘাটে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় হয়েছে। লোকাল বাসে করে পাটুরিয়া পুরাতন ট্রাক টার্মিনালে আসছেন এসব যাত্রী। এর পর প্রায় আধা কিলোমিটার হেঁটে তাঁরা লঞ্চঘাটে যাচ্ছেন। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লঞ্চের জন্য অপেক্ষায় থাকার পর তাঁরা লঞ্চে উঠছেন। এ ছাড়া এসব যাত্রীর অনেকে ফেরিতেও গিয়ে উঠছেন। এরপর নৌপথ পারাপার হয়ে দৌলতদিয়া প্রান্তে গিয়ে নামছেন। এ ছাড়া দূরপাল্লার বাসে করেও যাত্রীরা পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসছেন। তবে এসব দূরপাল্লার বাস ও যাত্রীর চাপ কম। ঘাটে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে এসব দূরপাল্লার বাস ও যাত্রীরা ফেরিতে উঠছেন। প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে করেও ঈদে ঘরমুখী মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তবে এর সংখ্যা এবার সীমিত।

ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক নূরুল আমিন স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দায় ঈদ করতে যাচ্ছেন। আজ সকাল ৯টার দিকে লঞ্চঘাট এলাকায় কথা হলে তিনি বলেন, এবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজটে আটকে থাকতে হয়নি। তবে লঞ্চঘাটে এসে কিছু সময় লঞ্চের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। ঈদের আগে তিনি লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানান।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘাট এলাকায় ২০ থেকে ২৫টি যাত্রীবাহী বাসের সারি দেখা যায়। এসব যানবাহন আধা ঘণ্টার মধ্যে ফেরিতে উঠে যাচ্ছিল। পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাট এলাকায় কথা হয় সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাসের যাত্রী রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সাতক্ষীরা সদরে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘাট দিয়ে প্রতি ঈদে বাড়িতে যান। আগে ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা পাটুরিয়ায় ফেরির জন্য অপেক্ষা করে ভোগান্তির অভিজ্ঞতা থাকলেও এবারের চিত্রটা ভিন্ন। ঘাটে আসার আধা ঘণ্টা পর ফেরিতে গাড়ি ওঠার সুযোগ পাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কমেছে। ভোগান্তি ছাড়াই এবার ঈদে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহন নৌপথ পারাপার হচ্ছে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চাপ

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও আজ বাড়তি যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। কোথাও যানজটের খবর পাওয়া না গেলেও মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশের কয়েকটি স্থানে ধীরগতিতে ঈদযাত্রার যানবাহন চলাচল করছে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বানিয়াজুরী, মহাদেবপুর, বরঙ্গাইল ও টেপড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করছে। তবে কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব স্থানে পুলিশ সদস্যরা যানবাহনগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচলে সহায়তা করছেন।

ঈদযাত্রায় আজ মঙ্গলবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জ অংশের বিভিন্ন স্থানে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় সেলফি পরিবহনের বাসের চালক আরিফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার সড়কের কোথাও যানজটে আটকে থাকতে হয়নি। তবে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে বাসস্ট্যান্ড ও বিভিন্ন স্টপেজে ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে।

জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) কে এম মেরাজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রায় আজ যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপ বাড়লেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মানিকগঞ্জ অংশে কোথাও যানজট নেই। কয়েকটি স্থানে ধীরগতিতে চলাচল করছে। তবে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা একযোগে কাজ করছেন। এবারের ঈদযাত্রায় কোথাও যানজট হবে না বলে তাঁর আশা।