খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন। আজ মঙ্গলবার সকালে খুলনা রেলস্টেশনে
খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন। আজ মঙ্গলবার সকালে খুলনা রেলস্টেশনে

৫৫৩ যাত্রী নিয়ে খুলনা ছাড়ল ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ট্রেন

খুলনা থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য নতুন রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। প্রথম যাত্রায় ওই ট্রেনের যাত্রী ছিল ৫৫৩ জন।

খুলনা থেকে প্রথমবার এই ট্রেনের যাত্রা শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে। সেখানে আজ বেলা পৌনে ১১টায় ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

নতুন রুটের ট্রেনের নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী খুলনা থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ার ৪৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ৮৫১ টাকা ও এসি সিট ১ হাজার ১৮ টাকা। আজ রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খুলনা থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় যান। ট্রেনটিকেও সাজানো হয় উৎসবের আমেজে।

নতুন এই রুটে ২১২ কিলোমিটার দূরত্ব কমার পাশাপাশি সাশ্রয় হচ্ছে সময়, কমেছে ভাড়াও। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত নতুন এই রুটে ট্রেন চলাচলে উচ্ছ্বাসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রুটে সময় লাগছে মাত্র পৌনে চার ঘণ্টা। রেলওয়ের এই উদ্যোগে খুশি যাত্রীরা। তবে ভোর ছয়টার পরিবর্তে সকাল সাতটায় ট্রেনের যাত্রা শুরু করার দাবি করেছেন তাঁরা।

এই ট্রেন খুলনাবাসীর জন্য আশীর্বাদ। ট্রেন যখন চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা ঘুরে যেতে কমপক্ষে ৯ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে পৌনে চার ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো যাবে।
শহীদ হোসেন, যাত্রী

খুলনা নগরের  টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম ওই ট্রেনের যাত্রী হয়েছিলেন। তিনি বলেন, শীতকালে ভোর ছয়টায় অন্ধকার থাকে। ছয়টার ট্রেন ধরতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হতে হয়। শীতকালে ভোর পাঁচটা মানে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, রাস্তায় কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না। নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন ঝুঁকি থেকে যায়। এ কারণে সকাল ছয়টার পরিবর্তে শিডিউল এক ঘণ্টা বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

নতুন এই ট্রেনের বিষয়ে শহীদ হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, এই ট্রেন খুলনাবাসীর জন্য আশীর্বাদ। ট্রেন যখন চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা ঘুরে যেতে কমপক্ষে ৯ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে পৌনে চার ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো যাবে। শিডিউল অনুযায়ী সকাল ছয়টায় যাত্রায় যাত্রীদের জন্য একটু কষ্টকর। তবে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

খুলনা রেল স্টেশন মাস্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশিক আহমেদ বলেন, আজ সকাল ছয়টায় জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রথমবারের মতো খুলনা রেলস্টেশন ছেড়ে গেছে। এটা সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রথম দিন খুলনা থেকে ৫৫৩ জন যাত্রী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ট্রেনের সিট রয়েছে ৭৬৮টি।

ধারণক্ষমতার ৬৯ শতাংশ যাত্রী খুলনা থেকেই যাত্রা করেছেন। এ ছাড়া অন্যান্য স্টেশন থেকে যাত্রীরা উঠবেন। নওয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া, নড়াইল, কাশিয়ানী, পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকায় যাবে। ট্রেনটি সাপ্তাহিক ছুটি সোমবার। প্রতিদিন সকাল ছয়টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আর ঢাকা থেকে রওনা হবে রাত আটটায়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এই ট্রেন ঢাকা-খুলনা পথে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ নামে এবং ঢাকা-বেনাপোল পথে ‘রূপসী বাংলা’ নামে নতুন রেলপথ দিয়ে চলাচল করবে। দিনে দুইবার খুলনা–ঢাকা এবং ঢাকা–বেনাপোল পথে চলাচল করবে ট্রেনটি।

জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছাড়বে সকাল ছয়টায়। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে রাত ৮টায়। খুলনায় পৌঁছানোর কথা ১১টা ৪০ মিনিটে।

খুলনা থেকে ঢাকায় যাওয়ার ট্রেনের যাত্রী ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, বিদেশ থেকে ট্রেনের নতুন ইঞ্জিন ও বগি আনা হচ্ছে। ছয় মাস পর এই রুটে নতুন আরও ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছাড়বে সকাল ছয়টায়। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে রাত ৮টায়। খুলনায় পৌঁছানোর কথা ১১টা ৪০ মিনিটে। অন্যদিকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটির যশোরের বেনাপোল পৌঁছানোর কথা বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় যশোর থেকে ট্রেনটি ছাড়বে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে। আর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনার পথে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি চলাচল করে। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে খুলনায় যাচ্ছে। এই ট্রেনে খুলনা-ঢাকায় চলাচলে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘণ্টা। অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়েই চলাচল করছে। এই ট্রেনের সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টার মতো।