বিস্ফোরণে তিন শান্তিরক্ষী নিহত

পরিবারের বড় ছেলের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন মা-বাবা

শরীফের বাবা লেবু তালুকদারের হাতে সেনাপ্রধানের শোকবার্তা তুলে দিয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন ক্যাপ্টেন মুহাইমিনুল আকিব
ছবি: প্রথম আলো

শান্তিরক্ষী মিশনে সুদূর মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে গিয়ে বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন তিন বাংলাদেশি সেনাসদস্য। এর মধ্যে আছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার শরীফ হোসেন (২৬)। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড় শরীফ। পরিবারের বড় সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল শরীফের মা-বাবা। তাঁরা এখন শোকে মুহ্যমান।

শরীফ বেলকুচি পৌর এলাকার বেড়াখারুয়া গ্রামের লেবু তালুকদার (৫৫) ও পানজুরা খাতুনের (৪৮) ছেলে। আজ বুধবার সকালে বেড়াখারুয়া গ্রামে শরীফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মৃত্যুর খবর পেয়ে গ্রামের কয়েক শ মানুষ ওই বাড়িতে এসেছেন। লেবু ও পানজুরা দুজনই ছেলের কথা ভেবে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাঁদের আহাজারিতে পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁদের সান্ত্বনা দিতে আসা স্বজন ও প্রতিবেশীরাও কান্না ধরে রাখতে পারছেন না।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে আটটায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত দেড়টা) মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তি রক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিস্ফোরণে শরীফ হোসেনসহ তিনজন শান্তিরক্ষী নিহত হন। এ ঘটনায় টহল কমান্ডার মেজর আশরাফুল হক আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন সৈনিক জসিম উদ্দিন, সৈনিক জাহাঙ্গীর আলম ও সৈনিক শরীফ হোসেন। এর মধ্যে জসিম উদ্দিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানার কাটিঙ্গা গ্রামে। জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামে।

নিহত শরীফ হোসেনের চাচা নিজাম উদ্দিন বলেন, বেলকুচি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে শরীফ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০২১ সালে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হন। মিশনে যাওয়ার আগে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বড় সারটিয়া গ্রামের শাহেদ শেখের মেয়ে ছালমা খাতুনকে শরীফ বিয়ে করেন। শরীফের স্ত্রীকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাড়িতে তোলা হয়নি। শরীফের অন্য দুই ভাই-বোন হলেন কাওছার হোসেন (২২) ও লাকী খাতুন (২৩)।

একই গ্রামের কিশোর সোহেল রানা বলে, ‘শরীফ ভাইয়ের এমন মৃত্যুর খবরে আমরা স্তম্ভিত। এমন মৃত্যু হবে, আমরা কখনো ভাবতে পারিনি। শরীফ ভাই গ্রামে এলেই আমাদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন। আমাদের সঙ্গে শরীফ ভাইয়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ কারণে আমরা আশায় থাকতাম, শরীফ ভাই কবে আসবে।’

বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুল হক বলেন, শরীফ অত্যন্ত বিনয়ী ও নম্র ছেলে ছিলেন। তাঁর এমন মৃত্যুর ঘটনা বেদনাদায়ক। এমন সম্ভাবনাময় ছেলের অকালমৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

এদিকে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শরীফ হোসনের বাড়িতে সেনাপ্রধানের শোকবার্তা নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের ৩৫ আর্টিলারি ডিব্লগেটিং টুআইসি ক্যাপ্টেন মুহাইমিনুল আকিব। তাঁকে দেখেই শরীফের মা পানজুরা খাতুন কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় ওই বাড়িতে শোকাবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিছুক্ষণ পর সেনাপ্রধানের বার্তাসংবলিত একটি খাম শরীফের বাবার হাতে তুলে দেন ক্যাপ্টেন মুহাইমিনুল আকিব।

ক্যাপ্টেন মুহাইমিনুল আকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের শোকবার্তা নিয়ে আমরা এসেছি। নিহত শরীফ হোসেনের মৃতদেহ দেশে আনতে সব ধরনের প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।’