আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে একটা। যশোরের বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল প্রায় ফাঁকা। যাত্রীদের চিরচেনা উপচেপড়া ভিড় নেই। ইমিগ্রেশনে অধিকাংশ কাউন্টারের কর্মকর্তারা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। শ্রমিকদের তেমন ব্যস্ততা নেই। অনেকটা শঙ্কা-সংশয় নিয়ে ভারত থেকে যাত্রীরা ফিরছেন।
ছোট একটা ব্যাগ নিয়ে ভারত থেকে ফেরেন হীরালাল দাস। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা শহরের বাসিন্দা তিনি। বেনাপোলে ফিরে হীরালাল দাস বলেন, ‘গতকাল ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে শুনে কোনো কিছু কেনাকাটা না করেই ফিরে এসেছি। জিনিসপত্র নিয়ে প্রবেশ করতে দেবে কি না—এই আশঙ্কায় পরনের পোশাক ছাড়া ব্যাগে কিছুই নিয়ে আসিনি। ১০ দিন আগে কলকাতার বারাসাতে আত্মীয়বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার দিনে বেনাপোল বন্দরে উপচেপড়া ভিড় ছিল। ইমিগ্রেশন করতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছিল। কিন্তু আজ মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে পেট্রাপোল ও বেনাপোলে ইমিগ্রেশন শেষ হয়েছে। যাত্রীর চাপ একদমই নেই বললে চলে।’
সদলবল ভারত থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ ঢাকাপাড়ার বাসিন্দা বুদ্ধদেব বাগচি। তাঁরা আজ বেনাপোল দিয়ে ভারতে ফিরে যাচ্ছেন। বুদ্ধদেব বাগচি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বাংলাদেশে আত্মীয়বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। তখন বন্দরে খুব ভিড় ছিল। আজ অনেক ফাঁকা দেখছি। কেন এত ফাঁকা, বুঝতে পারছি না।’
বেনাপোল বন্দরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সোমবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল সীমান্তে দেশটির কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় পেট্রাপোল শূন্যরেখার ওপারে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তখন দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রী গমনাগমন বন্ধ ছিল। এক ঘণ্টা পর তাঁরা বিক্ষোভ শেষ করলে আবার আমদানি-রপ্তানি ও যাত্রী গমনাগমন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের প্রভাবে আজ যাত্রী গমনাগমন ও পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কিছুটা কমেছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা একটা পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার মানুষ যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ৭৭৫ জন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন ৭৬৯ জন। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত যাত্রী আসা-যাওয়া হলেও মূলত বেলা দুইটা পর্যন্ত যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। সে অনুযায়ী সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও ৩০০ থেকে ৪০০ যাত্রী যাতায়াত করতে পারেন বলে পুলিশ জানায়। গতকাল দুই দেশের মধ্যে প্রায় চার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছেন। যদিও ৫ আগস্টের আগে এই সংখ্যা ছিল প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজারের মতো।
জুলাই মাসের পর থেকে ভারত সরকার বাংলাদেশের জনগণের ভ্রমণ ভিসা দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। এর পর থেকে যাত্রীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষের ভিসার মেয়াদ রয়েছে। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে গমনাগমন আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে মানুষের যাতায়াত কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যাত্রী কমতে পারে। তা ছাড়া ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকাংশ যাত্রীর ভারতীয় ভিসার মেয়াদ রয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিনই একটু একটু করে সংখ্যা কমতে থাকবে।’
পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। বেলা দুইটা পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের পেট্রাপোলে পণ্য নিয়ে ৬০০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে আমদানি–রপ্তানি কমে গেছে। তবে পেট্রাপোলে আন্দোলনের তেমন প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের ওপারে পণ্যবোঝাই ৬০০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে।
বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত ভারত থেকে ১০৫ ট্রাক পণ্য আমদানি ও ১০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যেখানে গতকাল আমদানি হয় ২৪৩ ট্রাক ও রপ্তানি হয় ২০১ ট্রাক পণ্য।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজীব নাজির বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ট্রাক বেশি যাতায়াত করে। দুপুর পর্যন্ত চিত্র দেখে এই চিত্র বোঝা যাবে না। তবে আমদানি-রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়েনি বলে মনে হচ্ছে।’