আজিজুলের চাকচিক্যহীন হোটেলে দিনে বিক্রি হয় গরুর ৩ মণ ভুনা মাংস

সপ্তাহের প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার তিলকপুর হাটে গরুর ভুনা মাংস খেতে দূরদূরান্ত থেকে ভোজনরসিক মানুষের আনাগোনা থাকে আজিজুলের হোটেলে
ছবি: প্রথম আলো

সপ্তাহের প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার তিলকপুরের হাটবার। এই দুই দিন গরুর ভুনা মাংস ও ভাত খেতে দূরদূরান্ত থেকে ভোজনরসিক মানুষের আনাগোনা থাকে চাকচিক্যহীন আজিজুলের হোটেলে। স্বাদে অনন্য আর দামে সস্তা হওয়ায় মানুষ খেতে এসে সিরিয়াল দেন। প্রতি হাটবারে গরুর তিন মণ মাংস আর তিন মণ চালের ভাত রান্না করেন আজিজুল। সঙ্গে বানানো হয় আধা মণ আটার রুটি। কাপড় দিয়ে ঘেরা চাকচিক্যহীন এ হোটেলের সুনাম পুরো জেলায়।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর হাটে মসজিদের সামনে হোটেলটির অবস্থান। আক্কেলপুর উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণে ১৫ কিলোমিটার আর সান্তাহার রেলওয়ে জংশন থেকে উত্তরে ১০ কিলোমিটার গেলেই তিলকপুর হাট। কোনো পাকা ঘর নেই।

কাপড় দিয়ে ঘেরা থাকায় অনেকে কৌতুক করে ‘হোটেল আল ঘিরাদিয়া’ বলেও ডাকেন। তবে আজিজুলের হোটেল নামেই বেশি পরিচিত হোটেলটি। আজিজুল ইসলাম নওগাঁ সদর উপজেলার ধোপায়কুড়ি গ্রামের প্রয়াত রইস উদ্দিনের ছেলে।

সপ্তাহে দুই দিন—রবি ও বৃহস্পতিবার হাটবারে আজিজুলের হোটেল খোলা থাকে। সকাল সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত হোটেলটিতে কেনাবেচা চলে। প্রতি হাটবারে হোটেলে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার কেনাবেচা হয়। হোটেলটিতে আজিজুলসহ ১২ জন বাবুর্চি ও কর্মচারী কাজ করেন। আজিজুল গরিব মানুষের কাছে খাবারের দাম কম রাখেন। অনেককে বিনা মূল্যে ভাত-মাংস খাওয়ান।

কাপড় দিয়ে ঘেরা থাকায় অনেকে কৌতুক করে ‘হোটেল আল ঘিরাদিয়া’ বলেও ডাকেন। তবে আজিজুলের হোটেল নামেই বেশি পরিচিত হোটেলটি

গত রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, ডেকোরেটরের কাপড় দিয়ে ঘেরা হোটেলের চারপাশ। হোটেলের ভেতরে চেয়ার-টেবিল পাতা। ভেতরে চুলায় রান্না করা এক ডেকচিতে গরুর ভুনা মাংস, পাশে অন্য ডেকচিতে ভাত। একটু দূরে গ্যাসের চুলায় আটার রুটি তৈরি হচ্ছে। হোটেলের ভেতরে ডালিতে গরুর কাঁচা মাংস রান্নার জন্য প্রস্তুত করে রাখা। ভোজনরসিক মানুষ এসে কেউ গরুর ভুনা মাংস দিয়ে রুটি, কেউ আবার ভাত খাচ্ছেন। হোটেলে রান্নার কাজ করছিলেন আজিজুল নিজেই। সুমন নামের আরেক বাবুর্চি তাঁকে রান্নায় সহযোগিতা করছিলেন। অন্য কর্মচারীরা তখন দোকান সামলাচ্ছিলেন। অনেকেই বাড়িতে সবাই মিলে খাওয়ার জন্য গরুর ভুনা মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০০০ সালে তিনি হোটেলের দায়িত্ব নেন। এর আগে তাঁর বাবা চালাতেন। প্রথম দিকে ১০ কেজি মাংস আর ২০ কেজি চাল রান্না করতেন। আটার রুটি বানাতেন দুই কেজি। এক যুগ আগে হোটেলে গরুর মাংসের চাহিদা বাড়তে থাকে। দূরদূরান্তের মানুষ ভুনা মাংস খেতে হোটেলে ভিড় করতে শুরু করেন। তখন প্রতি হাটবারে গরুর এক থেকে দুই মণ মাংস রান্না করতেন। এখন কোনো হাটে তিন মণ, আবার কখনো সাড়ে তিন মণ মাংস রান্না করা হয়।

আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘কখনো নিজে গরু কিনে জবাই করি, আবার কখনো কসাইয়ের কাছ থেকে মাংস কিনি। নিজে গরু কিনে জবাই করলে মাংস ভালো পাওয়া যায়। দামও কম পড়ে।’ তিনি বলেন, প্রতি হাটবারে তিনিসহ ১২ জন কর্মচারী ও বাবুর্চি কাজ করেন। হাটবারের আগের দিন সবাই হোটেলে চলে আসেন। গভীর রাত পর্যন্ত মসলা বাটার কাজ করেন। ফজরের আজানের পর রান্নার কাজ শুরু হয়। বেলা ১১টার পর আরেক দফা মাংস রান্নার কাজ হয়। এখন গরুর মাংস পুরো প্লেট ২২০ টাকা আর অর্ধেক প্লেট ১২০ টাকা বিক্রি করছেন। প্রতি হাটবারে তাঁর লক্ষাধিক টাকার কেনাবেচা হয়।

আদমদীঘি উপজেলার শাওল বাজারের সুতা ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম গরুর ভুনা মাংস কিনতে বাড়ি থেকে বাটি নিয়ে এসেছেন। বাড়িতে আসা মেহমানদের খাওয়ানোর জন্য তিনি আজিজুলের হোটেল থেকে ভুনা মাংস কেনেন। তিনি বলেন, তাঁর বাসায় মেহমান এসেছেন। এ সময়ে বাসায় মাংস কিনে নিয়ে রান্নার সময় নেই। এ কারণে আজিজুলের হোটেল থেকে গরুর এক হাজার টাকার ভুনা মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আগেও আজিজুলের হোটেল থেকে অনেক ভুনা মাংস কিনেছেন।

তিলকপুর হাটের ইজারাদার বাবলু হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি হাটবারে আজিজুলের হোটেলে অনেক মানুষ গরুর ভুনা মাংস ও ভাত খেতে আসেন। খাওয়ার জন্য সিরিয়াল দিতে হয়। প্রতি সপ্তাহে দুই হাটবারে আজিজুল যে পরিমাণ গরুর ভুনা মাংস বিক্রি করেন, অনেক হোটেলে পুরো মাসেও তা বিক্রি হয় না।