নির্যাতনে আহত শিক্ষার্থীকে পাঠানো হলো ঢাকায়, তদন্ত কমিটি গঠন

নির্যাতনের শিকার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুকুলকে (মাঝে) উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার দুপুরে ঢাকায় নেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের একটি কক্ষে নির্যাতনে আহত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে) পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে আজ সোমবার তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

এদিকে মুকুলকে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিনের নির্দেশে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক নাজমুল কায়েসকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মো. মাহফুজ আলম ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রিফাত ফেরদৌস।

সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া চিকিৎসকদের পরামর্শে মুকুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তাঁর চিকিৎসায় যাবতীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. খোরশেদ আলম, হল প্রাধ্যক্ষ মো. আরিফ হোসেন ও ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান তানভীর কায়সার বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুকুলকে দেখতে যান। পরে তাঁরা ঘটনার বিষয়ে উপাচার্য, প্রক্টর, প্রাধ্যক্ষ ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর পৃথক লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। বিষয়টি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও আশ্বাস দেন তাঁরা।

আশ্বাসের পর রোববার দুপুরে আহত মুকুল আহমেদ তাঁর বাবা সাফিজ উদ্দীনের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। অভিযোগ পাওয়ার পর যে কক্ষে আটকে মুকুলকে নির্যাতন করা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল কর্তৃপক্ষ সেটি সিলগালা করে দিয়েছে।

সোমবার বেলা দুইটার দিকে আহত মুকুল আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসার জন্য তিনি ভর্তি হবেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাতের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হলে তা করাবেন। এখনো তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে তীব্র যন্ত্রণা আছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, সেরে উঠতে অনেক দিন লাগতে পারে। শরীরে অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, সে জন্য চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন।

সঙ্গে থাকা মুকুলের বাবা সাফিজ উদ্দীন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ছেলের এই অবস্থায় যে উন্নত চিকিৎসা করাব, সেই সামর্থ্য আমার নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলেরে বিনা দোষে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, জানি না দোষীদের শাস্তি হবে কি না।’

গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ৪০১৮ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে মুকুল আহমেদকে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়। পিটিয়ে তাঁর বাঁ হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আহত মুকুলের অভিযোগ, ইংরেজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তানজীদ মঞ্জু ও সিহাব উদ্দিন এ নির্যাতন চালিয়েছেন।

অভিযুক্ত তানজীদ মঞ্জুর দাবি, ‘ওই ছেলে (মুকুল) নীরবে শিবির করে। আমার ছোট ভাইদের বলেছিলাম, ওকে ডেকে নিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করার জন্য। আমার ছোট ভাইয়েরা ছেলেটিকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছে মাত্র। মারধর করেনি। কোথাও পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে গেছে, এখন আমাকে ফাঁসানোর জন্য সেটা ব্যবহার করছে।’