কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত

তিন দিন পর আবার গোলাগুলি শুরু, আতঙ্কে ৩১ গ্রামের মানুষ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ওপারে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলি চলছে। গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে আছেন জামতলী এলাকার মানুষ
ছবি: প্রথম আলো

তিন দিন বন্ধ থাকার পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবার গোলাগুলি ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ শুরু হয়েছে। এতে টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির তিনটি ইউনিয়নের ৩১টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্ক ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন পাহাড়ে টানা দুই মাস ধরে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির (এএ) তুমুল সংঘর্ষ চলছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। আরাকান আর্মির আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থেকে রাত ও দিনে ছোড়া হচ্ছিল মুহুর্মুহু গুলি ও অসংখ্য মর্টারের গোলা। কয়েক দিন আগে বেশ কয়েকটি মর্টারের গোলা এসে পড়েছিল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। কিন্তু ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল থেকে ওপারে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। তাতে এপারের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। অনেকে নেমে পড়েন ধানখেত, জুমচাষসহ নানা কাজে। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ওপারে গোলাগুলি ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপের বিকট শব্দে এপারে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঢেকুবনিয়া সেনা ব্যারাকের পাশে নাকপুরা এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছিল। থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছিল মর্টারের গোলা।
নুর আহমদ আনোয়ারী, চেয়ারম্যান, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ, টেকনাফ

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঢেকুবনিয়া সেনা ব্যারাকের পাশে নাকপুরা এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছিল। থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছিল মর্টারের গোলা। গোলাগুলির বিকট শব্দ এপারের খারাংখালী গ্রামের লোকজন শুনতে পান। আজ শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী, উলুবনিয়াসহ সাতটি গ্রামে। সীমান্তে বিজিবি সতর্ক আছে।

গতকাল রাতে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বটতলী, ফাঁড়িরবিল, আঞ্জুমানপাড়া ও ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিমকুল, তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি সীমান্তেও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন লোকজন।

গতকাল রাতে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বটতলী, ফাঁড়িরবিল, আঞ্জুমানপাড়া ও ঘুমধুম ইউনিয়নের পশ্চিমকুল, তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি সীমান্তেও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন লোকজন।

ঘুমধুম ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের (তুমব্রু) সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টু প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল গভীর রাতে ওপারে রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে আজ বিকেল চারটা পযন্ত তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশের পাহাড়ে তুমুল লড়াই ও গোলাগুলি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, তিন দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল রাতে বাইশফাঁড়ি সীমান্তে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের কাছে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে আসা কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, মংডু শহরের পেছনের পাহাড় ও আশপাশের এলাকায় আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে। মংডু শহরে ১০-১২ দিন ধরে কড়াকড়ি চলছে। হাটবাজারে লোকসমাগম করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিকেল চারটার পর মংডু শহরের সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হচ্ছে। সড়কে টহল দিচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। মংডু থেকে উত্তর দিকে তুমব্রুরাইট পর্যন্ত (ঘুমধুমের কাছে) ৩৭ কিলোমিটারের ‘মংডু-ঢেকুবনিয়া’ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।

উখিয়ার পালংখালীর বটতলী গ্রামের লোকজন জানান, তিন দিন গোলাগুলি বন্ধ থাকায় ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের অন্তত সাত হাজার মানুষ স্বস্তিতে ছিলেন। অনেকে পাশের ধানখেত ও চিংড়ি খামারে কাজে নামেন। কিন্তু গোলাগুলি শুরু হওয়ায় তাঁরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

ঘুমধুমের পশ্চিমকুল গ্রামের অটোরিকশাচালক আমির হোসেন বলেন, ওপারের গোলাগুলির কারণে দুই মাস ধরে ১৭ কিলোমিটারের ‘ঘুমধুম-বাইশারী’ সড়কে মানুষের চলাচল কমে গেছে। যাত্রী না পাওয়ায় তিন শতাধিক অটোরিকশাচালক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত তিন দিন সড়কে কিছু গাড়ি চলাচল করলেও এখন আবার বন্ধ হয়ে গেছে। এপারের মানুষের জীবন–জীবিকা যেন ওপারের গোলাগুলিতে থমকে আছে।