উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে দুটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষে রোহিঙ্গা মাঝি নিহত

রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির
ফাইল ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৫) মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় এক রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে আশ্রয়শিবিরের সি-ব্লকে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সলিম উল্লাহ (৩৪) নামের ওই রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হন। তিনি মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের বি–ব্লকের সাব–মাঝি ছিলেন।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গতকাল রাত ৯টার দিকে আশ্রয়শিবিরের সি-ব্লকের পাহাড়ে অবস্থান নেয় মিয়ানমারের সশস্ত্র দুটি গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। মাঠে ছিলেন আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা রোহিঙ্গা নবী হোসেন বাহিনীর কয়েক শ সদস্য। নবী হোসেন বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন আরএসও-এর পক্ষে। রাত সোয়া ৯টার দিকে আরসা সন্ত্রাসীরা গোলাগুলি শুরু করলে আরএসও ও নবী হোসেন বাহিনীর সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে। গোলাগুলি ও উভয় পক্ষের সংঘর্ষ চলতে থাকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এরপর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা গোলাগুলি বন্ধ করে আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন গলি ও পাশের পাহাড়-জঙ্গলে আত্মগোপন করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আরসার সদস্যরা রাত ৯টার দিকে আশ্রয়শিবিরে এসে নবী হোসেন বাহিনীর সমর্থক কয়েকজন মাঝিকে খুঁজতে থাকেন। এ সময় তাঁরা একজন মাঝিকে অপহরণের চেষ্টা চালান। খবর রটে গেলে আরসাকে ঠেকাতে মাঠে নামেন নবী হোসেন বাহিনীর সঙ্গে আরএসও-এর সদস্যরাও। গভীর রাত পর্যন্ত দুই পক্ষের গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় সাব–মাঝি সলিম উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন। তবে কোন পক্ষের গুলিতে তিনি মারা গেছেন, তা নিশ্চিত করা কঠিন।
রোহিঙ্গারা নেতারা বলেন, গোলাগুলির শুরুর আগে আশ্রয়শিবিরের প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ঘুমিয়ে ছিলেন। গোলাগুলির শব্দে সবার ঘুম ভেঙে যায়। আতঙ্কে নারী ও শিশুরা কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করে। অন্ধকার রাতে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না সেখানে।

উখিয়ার মধুরছড়াসহ ১৫টি আশ্রয়শিবিরের প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সাত শতাধিক সদস্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এপিবিএন শিবিরের অলিগলিতে টহল ও পাহারা বসালেও রাতের বেলায় দুর্গম পাহাড়ের বসতিতে টহলে যান না। কারণ নিরাপত্তার অভাব।

১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ছৈয়দ হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আশ্রয়শিবিরগুলোতে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীসহ তিনটি বাহিনী তৎপর আছে। রাতের বেলায় গোষ্ঠীর সদস্যরা গোলাগুলি-সংঘর্ষে জড়িয়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পুলিশকে লক্ষ্য করেও তাঁরা গুলি ছোড়েন। মূলত আশ্রয়শিবিরের মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চক্রান্ত করছে।

সলিম উল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে এপিবিএন অধিনায়ক বলেন, আশ্রয়শিবিরে অভিযান চলছে। পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যমতে, গত সাড়ে চার মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ২৬ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ৭ জন আরসা সন্ত্রাসী। অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।