গাইবান্ধা শহরের ব্যস্ততম ডিবি রোডে রয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। গত শনিবার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসংলগ্ন পলাশবাড়া এলাকায়
গাইবান্ধা শহরের ব্যস্ততম ডিবি রোডে রয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। গত শনিবার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসংলগ্ন পলাশবাড়া এলাকায়

এখনো সরেনি ২০টি খুঁটি

গাইবান্ধা শহরের ব্যস্ততম ডিবি রোডে চার লেন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ওই সড়ক থেকে ১৫-২০টি বিদ্যুতের খুঁটি সরানো হয়নি। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে।

এ সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষ্য, চার লেনের কাজ শেষ হলেও সড়কের দুই পাশে অনেক অবকাঠামো রয়ে গেছে। এসব অবকাঠামো অপসারণ না হওয়ায় খুঁটি সরানো যাচ্ছে না।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা শহরের পূর্ব দিকে বড় মসজিদ থেকে পশ্চিমে পুলিশ সুপার কার্যালয় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সড়ক নির্মাণে ছয় কোটি ও জমি অধিগ্রহণের জন্য ১১১ কোটি টাকা। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স এই কাজের দায়িত্ব পায়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন। তবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিছু কাজ অসমাপ্ত রেখে ২০২২ সালের প্রথম দিকে চার লেনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। এদিকে সড়কটি প্রশস্ত হওয়ায় দুই পাশের বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর প্রয়োজন হয়। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ করে সওজ। কাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সড়ক থেকে এখনও ১৫-২০টি খুঁটি সরানো হয়নি।

সড়ক থেকে খুঁটি না সরানোর কারণে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগে।
হোসেন আলী, পলাশপাড়া এলাকার বাসিন্দা

এ বিষয়ে সওজের গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ আখতার প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

জানতে চাইলে গাইবান্ধা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-২–এর (নেসকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসিফ বলেন, সড়কের উত্তর পাশে এখনো অনেক স্থাপনা রয়েছে। চার লেনের কাজ শেষ হলেও সেগুলো অপসারণ করা হয়নি। তারপরও ওইসব স্থানের ফাঁকে ফাঁকে নতুন খুঁটি বসানো হয়েছে। সেগুলোতে বৈদ্যুতিক তার লাগানো যাচ্ছে না। স্থাপনা অপসারণ হলেই নতুন লাইন চালু করে পুরোনো খুঁটি সরানো হবে।

গত শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, শহরের রেলগেট থেকে পশ্চিম দিকে উত্তর পাশে এসব খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। সোয়া এক কিলোমিটার অংশে এসব খুঁটির অবস্থান। দক্ষিণ পাশেও কিছু কিছু জায়গায় খুঁটি রয়েছে। বিশেষত এই অংশে হকার্স মার্কেট, ডাকবাংলোর মোড়, সাদুল্লাপুর মোড়, ফকিরপাড়া, পলাশপাড়া, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সড়কে খুঁটি রয়েছে। সেখান দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

এলাকাবাসী জানান, শহরের রেলগেট থেকে পশ্চিম অংশে ফায়ার সার্ভিস, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ের মতো কার্যালয় রয়েছে। সড়কের পশ্চিম অংশ সব সময় ব্যস্ত থাকে। এ অংশের খুঁটি সরাতে দেরি হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে। সড়কটিও সরু হয়ে গেছে।

গাইবান্ধা শহরের ফকিরপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী দীপন মিয়া বলেন, ‘সড়ক থেকে খুঁটি না সরানোর কারণে সেখানকার ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। যেখানে খুঁটি আছে, সেখানে কখনো সড়ক দিয়ে, কখনো দোকানপাট ঘেঁষে যানবাহন চলাচল করছে।’

পলাশপাড়া এলাকার বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, সড়ক থেকে খুঁটি না সরানোর কারণে বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগে।

শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের ট্রাকচালক অকিল মিয়া বলেন, মূল সড়ক ঘেঁষে খুঁটি থাকায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। খুঁটির জায়গায় যানবাহন পারাপার করতে যানজট হয়।