খেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে ট্রলিতে তোলা হয়। সম্প্রতি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়ার কাউখালী গ্রামে
খেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে ট্রলিতে তোলা হয়। সম্প্রতি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়ার কাউখালী গ্রামে

পটুয়াখালী

তরমুজ চাষে সমৃদ্ধির ঝিলিক

পটুয়াখালীর গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় তরমুজের বেশি চাষ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।

দুই চোখ যেদিকে যায়, সেদিকে শুধু তরমুজ আর তরমুজ। মাঠের পর মাঠজুড়ে তরমুজখেত। খেত থেকে তরমুজ তুলে এক স্থানে জড়ো করছেন কৃষক। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে খেত থেকেই ভালো দাম দিয়ে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই তরমুজ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তরমুজর ঘিরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

এই দৃশ্য পটুয়াখালীর উপকূলীয় গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার। কৃষকেরা বলছেন, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীতে প্রচুর তরমুজ চাষ হয়। রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ লাভজনক হওয়ায় তাঁদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। প্রতিবছরই বাড়ছে তরমুজ চাষ। এবার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার জেলায় ২৮ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ হয়েছে গলাচিপা উপজেলায়। এখানে ১১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। এ ছাড়া রাঙ্গাবালীতে ৮ হাজার ২৬২ হেক্টর, কলাপাড়ায় ২ হাজার ৩৭০ হেক্টর, বাউফলে ৩ হাজার ১৩১ হেক্টর, দশমিনায় ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৯৭ হেক্টর, মির্জাগঞ্জে ৬৫ হেক্টর ও দুমকি উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৯২ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন। উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

* গত মৌসুমে জেলায় মোট ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন। * এবার জেলায় ২৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ ৯২ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, গত মৌসুমে জেলায় মোট ২২ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে জেলায় তরমুজের আবাদ বেড়েছে।

গলাচিপা উপজেলার আমখোলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা খেত থেকে তরমুজ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গ্রামের বারেক মৃধা (৫৫) জন্মসূত্রেই কৃষক। কয়েক বছর ধরে রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ করে আসছেন তিনি। তিনি এবার ৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।

কৃষক বারেক মৃধা বলেন, মৌসুমের আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকার মহাজনেরা অগ্রিম দাদন দিতে এলাকায় চলে আসেন এবং ফলনের পর তরমুজ সংগ্রহ করতে এলাকায় অবস্থান করেন। ইতিমধ্যে তিনি খেত থেকে তরমুজ তুলে মহাজনদের কাছে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন।

রাঙ্গাবালীর ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের নয়াভাঙ্গনী গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেন জানান, তিনি গত বছর ২০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। ৪০ হাজার তরমুজ বিক্রি করেছিলেন তিনি। এবারও তিনি ২০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। এবার ৪৫ থেকে ৫০ হাজারের মতো তরমুজ পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

ঢাকার কদমতলী এলাকার ব্যবসায়ী আসলাম শেখ জানান, এখান থেকে তরমুজ কিনে লঞ্চে ঢাকায় পাঠাতে তিনি এখন রাঙ্গাবালীতে। তাঁর মতো অনেক ব্যবসায়ী এখানে তরমুজের জন্য দাদন দিয়ে রেখেছেন। তাঁর মতো অনেক ব্যবসায়ীই চরাঞ্চল থেকে ট্রলার ও ট্রাকে তরমুজ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন।

ফলন ভালো হওয়ার বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পটুয়াখালী কার্যালয়ের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক আলোকে বলেন, আবাদের পর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলে দোঁআশ মাটিতে তরমুজের ফলন ভালো হয়। বৃষ্টির কারণে মাটিতে প্রচুর রস থাকায় তরমুজ আকারে বড় ও উৎপাদন বেড়ে যায়।