বৃহস্পতিবার দুপুরে কোটা সংস্কার দাবিতে এবং চলমান আন্দোলনে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবিটি জেলা শহরের ইসলামবাগ এলাকায়
বৃহস্পতিবার দুপুরে কোটা সংস্কার দাবিতে এবং চলমান আন্দোলনে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছবিটি জেলা শহরের ইসলামবাগ এলাকায়

পঞ্চগড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আড়াই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ

পঞ্চগড়ে চলমান কোটা সংস্কার দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আড়াই ঘণ্টা ধরে মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে শুরু হয়ে বেলা পৌনে ৩টা পর্যন্ত জেলা শহরে চৌরঙ্গী মোড়ে শহরের মূল প্রবেশপথ করতোয়া সেতুর মুখে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়েন সড়কপথে চলাচল করা সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া সকাল থেকে পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি বলে জানা গেছে।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের জজ কোর্ট–সংলগ্ন ডোকরোপাড়া এলাকায় জড়ো হতে থাকেন জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসে জড়ো হন। সেখানে করতোয়া সেতুর প্রবেশমুখে বসে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাঁরা ‘আমার ভাই মরল কেন? জবাব চাই, জবাব চাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা না মেধা? মেধা–মেধা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

অবরোধ শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা পর সেখানে পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া উপস্থিত হন। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা এই রাজপথে আছ, তোমাদের একটা দাবি নিয়ে আন্দোলন করতেছ, তোমাদের এই কষ্টের প্রতি, এই আন্দোলনের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আছে। তোমরা ২০১৮ সালে আন্দোলন দেখেছ। সেই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোটা বাতিল করেছিল। পরবর্তীকালে সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা সেই কোটার বিষয়ে আদালতে গিয়েছেন। সেই কোটা বহাল রেখে আদালতে রায় হয়েছে। তোমরা কি জানো, তোমরা যে রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছ, এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারও আপিল করেছে? সরকার বলেছে, এই রায় সরকারের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়। এই বিচারাধীন বিষয়ে আমাদের কথা হলো তোমরা ধৈর্য ধরো।’

এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নানা রকম স্লোগানে সংসদ সদস্যের বক্তব্যে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন তাঁদের এই আন্দোলনে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের যেন কোনোভাবে প্রশাসন থেকে হয়রানি না করা হয়, সেই নিশ্চয়তা সংসদ সদস্যের কাছে চান।’ এর জবাবে নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘তোমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করো। তবে মনে রাখবা, তোমাদের এই আন্দোলেনে ঢুকে কোনো দলেব বা কোনো গোষ্ঠীর কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে না পারে, সেদিকে তোমাদের সচেতন থাকতে হবে। আর তোমাদের কোনো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর ওপর কোনো দলীয় বা পুলিশি হয়রানি করা হবে না, এটা আমি কথা দিচ্ছি।’

এদিকে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া শহরে গাড়িতে করে পুলিশ সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

খোঁজে নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলা শহর ছাড়াও জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলতলা ও ভজনপুর এলাকায় এবং বোদা উপজেলার সাকোয়া এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।