নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় শিক্ষার্থী নাসিম শেখ (২৪) হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার রঘুনাথপুরে এ মানববন্ধনে অংশ নেন নাসিমের পরিবারের সদস্য ও এলাকার লোকজন।
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এলাকার লোকজন সমবেত হন নিহত নাসিমের বাড়ির সামনে। এরপর তাঁরা ‘নাসিম হত্যার বিচার চাই’ স্লোগান দিতে দিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে রঘুনাথপুর বাজারে যান। পরে বাজারের প্রধান চারটি সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন নাসিমের মা তানিয়া সুলতানা, দাদি নাহার সুলতানা, চাচাতো ভাই মেহেদী হাসান, শওকত হোসেন, তমজিদ শেখ ও আলীম শেখ।
একমাত্র সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় নাসিমের মা তানিয়া সুলতানা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। আমার কলিজারে যারা নিয়ে গেছে, আমি তাদের বিচার চাই। আমি আর কিছু চাই না।’
মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রথমে আমরা জানতে পারি যে সড়ক দুর্ঘটনায় নাসিমের মৃত্যু হয়েছে। পরে নাসিমের শরীরে কোপানোর চিহ্ন দেখে আমরা বুঝতে পারি এটা সড়ক দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়েছে।’
মানববন্ধনে আসা লোকজন বলেন, প্রতিদিনের মতো ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি রঘুনাথপুর থেকে পাশের চানপুর গ্রামে এক মসজিদে আরবি পড়তে যান নাসিম। পরে রাত আটটার দিকে পড়া শেষ করে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তাঁর শিক্ষক আব্দুল্লাহ বিশ্বাস। ফেরার পথে চানপুর-রঘুনাথপুর আঞ্চলিক সড়কে তানজির নামের এক ব্যক্তির বাড়ির সামনে পৌঁছালে তাঁদের গাড়ির গতিরোধ করে চানপুর এলাকার কাইয়ুম সরদারসহ ছয় থেকে সাতজন। এ সময় তারা নাসিমকে হত্যা করে এবং হত্যার বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি দেয় সঙ্গে থাকা আব্দুল্লাহকে। ভয়ে সে সময় আব্দুল্লাহ বিষয়টি কাউকে বলেননি। ফলে নাসিমের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় হয়েছে, এমন খবর ছড়ায়।
কিন্তু তখন তাঁর পরিবারের দাবি ছিল, নাসিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরে নাসিমের সঙ্গে থাকা আব্দুল্লাহ সেদিনকার ঘটনা সবাইকে বলে দেন। এ ঘটনার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে নাসিমের পরিবার। এদিকে হত্যাকাণ্ডে কাইয়ুম সরদারসহ যাঁদের নাম উঠেছে, তাঁরা সবাই এলাকা থেকে পালিয়েছেন।
নাসিমের সঙ্গে থাকা আব্দুল্লাহ বলেন, ‘নাসিম আর আমার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় সেদিন রাতে আমরা একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৬ থেকে ৭ জন লোক আমাদের গতিরোধ করে। তখন নাসিমকে তারা হত্যা করে এবং বিষয়টি কাউকে বললে আমাকেও মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ভয়ে আমি তখন কাউকে কিছু বলিনি। হত্যাকারীদের মধ্যে কাইয়ুম সরদার নামের একজনকে আমি চিনি।’
বক্তারা বলেন, প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দিতে হবে। সেই সঙ্গে নির্দোষ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।
এ ব্যাপারে কালিয়া থানা-পুলিশর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। তবে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে, প্রতিবেদন পেলে তদন্ত করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।