দুই দিন ধরে রাজশাহীর বিনোদপুর বাজারে দোকানপাট বন্ধ, চলাচলেও ভোগান্তি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে পুলিশের অবস্থান। আজ সোমবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

দুই দিন পর আজ সোমবার সকালে এক বস্তা আলু নিয়ে মহাসড়কের পাশে বসেছেন ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম। বাধ্য হয়ে তা–ই কিনতে আসছে মানুষ। পাশে আরও একজন সবজি ব্যবসায়ী দোকান মেলেছেন। তাঁরা বলছেন, কোনো উপায় না দেখে ঝুঁকি নিয়ে সবজির দোকান খুলেছেন।

দুই দিন ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী বিনোদপুর বাজারে পুলিশ পাহারায় থাকলেও অন্যান্য দোকানপাট খোলা হয়নি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের জের ধরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

আজ সকালে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেন্টু দাসের সেলুনটি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সকালে সেন্টু দাস বাজারের পাশে একটি টুলের ওপর অসহায় হয়ে বসে রয়েছেন। তিনি বলছেন, দোকান চালু করার ব্যাপারে কোনো আলোচনাই হয়নি। এ ছাড়া তাঁদের দোকানগুলোও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই দোকান ঠিক করার ব্যাপারও আছে।

অস্থায়ী দু–একটি সবজির দোকান খোলা হলেও বন্ধ রয়েছে অন্যান্য দোকানপাট। আজ সোমবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে

পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেকজন ব্যবসায়ী। নাম না জানিয়ে তিনি বলেন, দোকান খুলবে কী করে, ব্যবসায়ীদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো মামলা দিয়েছে। এখন কাকে ধরে না–ধরে, এই ভয়ে তাঁরা বাজারে আসতে পারছেন না। তিনি বলেন, যে কয়টা সবজির দোকান বসেছে, তা–ও হয়তো কিছুক্ষণ পর তুলে দেওয়া হতে পারে।

সবজি ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম জানান, যতক্ষণ পারেন, বসে থাকবেন। তা ছাড়া তাঁর আর চলার উপায় নেই। তাঁর দোকান পোড়েনি। তিনি ফুটপাতে বসে ব্যবসা করেন। এই ব্যবসাটা না করতে পারলে তাঁর কিছুতেই সংসার চলে না।

মহাসড়কের অপর পাশে পাকা ভবনে স্থায়ী দোকান রয়েছে। সেখানে আজ সকালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান দেখা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও বন্ধ রয়েছে।

বিনোদপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন জানান, তাঁরা তো চান সমস্যার সমাধান হোক। ব্যবসায়ীদের দোকান একদিকে পুড়ে গেছে, অন্যদিকে দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এটা একটা বড় সমস্যা। এ জন্য দুপুরে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটা বৈঠক রয়েছে। সেখানে আলোচনা করে যদি একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়, তাহলে ভালো হয়।

এদিকে গত শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে পশ্চিম দিকে রাজশাহীর তালাইমারী মোড়ে এবং পূর্ব দিকে বিহাস এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। সরাসরি কোনো যানবাহন এখন আর রাজশাহী শহর থেকে বিনোদপুর বাজার হয়ে নাটোরের দিকে যেতে পারছে না। ভেতরে অল্প কয়েকটি অটোরিকশা চালু রয়েছে। ভেঙে ভেঙে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে স্থানীয় লোকজন এই এলাকার ভেতরে চলাচল করছে।

আজ সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী তালাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে নামলেন। অটোরিকশাচালক তাঁদের কাছে দ্বিগুণ ভাড়া চাইলেন। এই নিয়ে তাঁদের মধ্যে কিছুক্ষণ তর্ক হলো। তারপর তাঁরা অটোরিকশাচালকের চাওয়া ভাড়া দিয়েই নামতে বাধ্য হলেন। একইভাবে বিহাস এলাকা থেকে কাটাখালি পর্যন্ত অন্য কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না। ভরসা সেই অটোরিকশা। তাতেও বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আর দূরপাল্লার গাড়িগুলো দুই দিন ধরে বিনোদপুর ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা বাদ দিয়ে বাইপাস সড়ক হয়ে চলাচল করছে।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এক বাসচালকের কথা–কাটাকাটির সূত্র ধরে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর বাজারে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লোকজন এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটি পুলিশ বক্স ও রাস্তার পাশের অন্তত ৩০টি দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯০ জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন এক শিক্ষার্থী। ছয় শিক্ষার্থীর চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।