চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইনজীবীদের সঙ্গে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এতে ৭৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। আজ বুধবার বিকেলে পুলিশ বাদী হয়ে নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলাগুলো করেন।
পুলিশ জানায়, এসব মামলায় ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বেশির ভাগই নগরের কোতোয়ালি এলাকার বান্ডিল সেবক কলোনির বাসিন্দা। এর মধ্যে সাতজন আইনজীবী হত্যায় জড়িত। তাঁরা হলেন রুমিত দাশ, সুমিত দাশ, গগন দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, আমান দাশ ও মনু মেথর।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহত আইনজীবীর পরিবার বাদী হয়ে রাতের মধ্যে হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল–সংলগ্ন বান্ডিল রোড সেবক কলোনি এলাকার একটি গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন। কেউ পেটাচ্ছেন আর কেউ কোপ মারছেন। মাথায় হেলমেট পরা দুই যুবককে দেখা যায় কোপাতে। সাইফুলের নিথর দেহ পড়ে থাকলেও তাঁকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন।
হামলা, ভাঙচুরের প্রতিবাদে সাইফুলসহ কিছু আইনজীবী প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বান্ডিল রোডে যান। ওই সময় সশস্ত্র লোকজন তাঁদের ধাওয়া দেন। হোঁচট খেয়ে পড়ে যান সাইফুল। বাকিরা দৌড়ে প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী মো. হাসান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে আজ সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার ২৭ জনকে আদালতের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আদালত প্রাঙ্গণে আসামি সুমিত দাশের মা মুক্তা দাশ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে সিটি করপোরেশনে সেবক হিসেবে কাজ করেন। ঘটনায় জড়িত নন। এ ছাড়া নগরের কোতোয়ালি থানা ভবনের সামনেও গ্রেপ্তার আসামিদের স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে রঙ্গম সিনেমা হল–সংলগ্ন বান্ডিল সেবক কলোনি এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি লোহাগাড়ার চুনতি এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে। সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করা হয়। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তাঁরা এ সময় বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর সংঘর্ষের সূত্রপাত। আড়াই ঘণ্টা পর বেলা তিনটার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।