ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় গিল্ডান বাংলাদেশ গ্রুপের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে তাঁরা এ বিক্ষোভ করেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে শ্রমিকেরা সড়ক ছেড়ে দিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ মালিকপক্ষ শ্রমিকদের প্রতি আন্তরিক হলেও গিল্ডান বাংলাদেশের গার্মেন্টস ডিভিশনে পরিচালক তাজুল ইসলামের কারণে শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন খাতে বরাদ্দকৃত টাকাসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শ্রমিকেরা। আজ সকালে ওই কর্মকর্তার লোকজন শ্রমিকদের কয়েকজনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকেরা।
আজ বেলা ১১টার দিকে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন গিল্ডান বাংলাদেশ গ্রুপের শ্রমিকেরা। ঘটনাস্থলে আশুলিয়া থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত আছেন। সড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজটে পায়ে হেঁটে, ভ্যান ও রিকশায় করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। তবে ওই স্থানে যাওয়ার পর ভ্যান ও রিকশা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বেলা দুইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে চন্দ্রামুখী লেন ছেড়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। ওই লেনে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বেলা পৌনে তিনটার দিকে মালিকপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলে অপর লেনটি ছেড়ে দেন শ্রমিকেরা। এতে উভয় পাশের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা অভিযোগ করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক শ্রমিকদের বছরে এক জোড়া জুতা, পিকনিকের আয়োজন, মানসম্মত খাবারসহ নানা ধরনের সুযোগ–সুবিধা দেন। শ্রমিকদের প্রতি বেশ আন্তরিক মালিক। তবে গিল্ডানের পরিচালক তাইজুল ইসলাম শ্রমিকদের এসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাইজুল শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ সুযোগ-সুবিধা নিজে আত্মসাৎ করেন।
শ্রমিকেরা আরও অভিযোগ করেন, তাঁরা তাইজুলের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করতে গেলে শ্রমিকদের ১০-১৫ জনকে মারধর করেন তাইজুলের লোকজন।
ওই কারখানার শ্রমিক হারুন বলেন, ‘কোম্পানির মালিক কম্বল দেন, কিন্তু তা আমাদের দেওয়া হয় গেঞ্জি সেলাই করে। মালিক জুতার জন্য টাকা দেন, কিন্তু তিনি সেই টাকা দেন না। এ ছাড়া আরও অনেক সুবিধা মালিক দিলেও তাইজুল সে টাকা আত্মসাৎ করেন। আজকে কারখানায় কাজ করতে গিয়ে দেখি, প্রশাসনের কোনো লোকজন নেই। দুই দিন ধরে একই অবস্থা। আজ বিষয়টি জানার জন্য মূল শাখা শাহরিয়ার কারখানায় আসার সময় পথে তাইজুলের লোকজন আমাদের মারধর করেন। অনেকের মাথা ফেটে গেছে। সেলাই দিতে হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি, তাইজুলের পদত্যাগ।’
মাথায় ব্যান্ডেজ পরা আহত শাহ পরান বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে শাহরিয়ার কারখানার দিকে ২০-২৫ জন আসতেছিলাম, তখন তাইজুলের লোকজন হামলা করেছেন। লাঠি দিয়া বাড়ি দিছে, ইটপাটকেল ছুড়ছে। তাদের কাছে ধারালো অস্ত্র ছিল।’
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, বেলা তিনটার দিকে শ্রমিকেরা সড়ক ছেড়ে দিয়ে সড়কসংলগ্ন কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। মালিকপক্ষ সমস্যা সমাধানে আলোচনা করছেন। শ্রমিকদের বিষয়টি জানানোর পর তাঁরা সড়ক ছেড়ে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে তাজুল ইসলামের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।