ভোলার ৬ পাঠাগারে ২ হাজার বই উপহার

প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশের উদ্যোগে ভোলার ছয়টি পাঠাগারে দুই হাজারের বেশি বই উপহার দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার শহরের দ্য ভোলা মিউনিসিপ্যাল কমিউনিটি ক্রেডিট সোসাইটি মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশের উদ্যোগে ভোলার ছয়টি পাঠাগারে দুই হাজারের বেশি বই উপহার দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শহরের দ্য ভোলা মিউনিসিপ্যাল কমিউনিটি ক্রেডিট সোসাইটি মিলনায়তনে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও একটি ব্যক্তিগত পাঠাগারে বইগুলো বিতরণ করা হয়।

বই পাওয়া পাঠাগারগুলো হলো—ভোলা সদর উপজেলার টাউন কমিউনিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (বাংলাস্কুল) পাঠাগার, ভেলুমিয়া চর চন্দ্রপ্রসাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাঠাগার, টবগি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাঠাগার, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর আলোর পাঠশালা পাঠাগার, জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাঠাগার ও তজুমদ্দিন উপজেলার কবি নজরুল ইসলাম পাবলিক লাইব্রেরি।

আয়োজকেরা জানান, চলতি বছর সারা দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঠাগার ও বৃদ্ধাশ্রমে মোট ৭৫ হাজার বই বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে বিকাশ। তাদের এ উদ্যোগের সহযোগী হিসেবে কাছ করছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। যেকোনো ব্যক্তি চাইলে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে এ উদ্যোগে অংশ নিতে পারেন। ইতিমধ্যে অনেকের ছোট ছোট অনুদান একত্র করে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পাঠাগারে সাড়ে ৭২ হাজার বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালেও সেই কার্যক্রম চলমান।

ভোলায় বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ভোলা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পারভীন আখতার। দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ভোলা সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. এরশাদ, ভোলা মিউনিসিপ্যাল কমিউনিটি ক্রেডিট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, নাগরিক আন্দোলনের ভোলা জেলার সদস্যসচিব এস এম বাহাউদ্দীন, জীবন পূরাণ আবৃত্তি একাডেমির পরিচালক মশিউর রহমান এবং বন্ধুসভার জহিরুদ্দিন ও মো. মাইনুদ্দিন।

বই পাওয়া পাঠাগারের মধ্যে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠাগার এবং একটি ব্যক্তিগত। দুই হাজারের বেশি বই সমানভাবে ছয়টি পাঠাগারে বণ্টন করে দেওয়া হয়

অধ্যক্ষ পারভীন আখতার বলেন, বই না পড়ায় নতুন প্রজন্মের মুখে নতুন নতুন শব্দ শোনা যাচ্ছে। বানানরীতি পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় বিকেল চারটা পর্যন্ত ক্লাসে থাকতে হতো। কীভাবে বই ধরব, পড়ব, উচ্চারণ ঠিক হচ্ছে কি না, যত্নসহকারে বই পড়ার নিয়মকানুন শেখাতেন আমাদের শিক্ষকেরা। আমরা টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে বই কিনেছি। সেই বই পড়া শেষে শেলফে সাজিয়ে রাখতাম। বইয়ের মধ্যে একটি নোট থাকত, একটি কাগজে বই সংগ্রহের ইতিহাস লিখে রাখতাম।’

মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে কিশোর-কিশোরীরা মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। মুঠোফোনের আসক্তি দূর করতে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু সে অনুপাতে পাঠাগার নেই। থাকলেও পর্যাপ্ত বই নেই। এ বাস্তবতায় বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের বই বিতরণ দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে পাঠাগারে পাঠক বাড়বে। দেশের মানুষ আলোকিত হবে।

বই পেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। টবগি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আশ্রাফ আলী বলেন, উপহারের বইয়ে তাঁদের পাঠাগার আরও সমৃদ্ধ হবে। বই পেয়ে তাঁরা আনন্দিত। এলাকার তরুণ প্রজন্ম ও পাঠকদের পাঠাভ্যাসে বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মদনপুর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন বলেন, বই পড়ে তাঁদের শিক্ষার্থীরা আলোকিত হবে।

বই বিতরণ অনুষ্ঠানে ভোলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন

কবি নজরুল ইসলাম পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে তাঁদের পাঠাগার স্থানীয় নতুন প্রজন্মকে বই পড়ায় উৎসাহিত করছে। বছরের সেরা পাঠকদের পুরস্কৃত করছে। তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে পাবলিক লাইব্রেরি কাজ করে যাচ্ছে। সেই কাজে সহযোগিতা করে বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্ট প্রশংসনীয় কাজ করছে।