খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এখনো দমকা হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাসে রাতেই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে সাগরের নোনাপানিতে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম।
পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। খাবার পানির উৎসগুলো তলিয়ে গেছে। ফসলের খেত ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বাঁধ ভেঙে উপজেলার লতা, সোলাদানা, গড়াইখালী, চাঁদখালী, দেলুটি, রাড়ুলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি উড়ে গেছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে। আইলার পর গত ১৫ বছরে এমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করা হচ্ছে। অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উচ্চ জোয়ারে। ভাটার সময় পানি নেমে যাওয়ার কথা থাকলেও তা সেভাবে নামেনি। পরে জোয়ারে নদীতে পানির উচ্চতা আরও বেড়েছে। এ কারণে বাঁধ ভেঙে ও উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে।
উপজেলার গড়াইখালী ইউনিয়নের কুমখালী গ্রামে শিবসা নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় গড়াইখালী ও চাঁদখালী ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গড়াইখালী গ্রামের বাসিন্দা সাফায়াত হোসেন বলেন, বাঁধটি অনেক আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সংস্কারকাজও চলছিল। তবে কাজ হচ্ছিল অত্যন্ত ঢিলেঢালাভাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন হলে হয়তো বাঁধটি ভাঙত না। ওই এলাকার বাঁধ ভাঙার কারণে গড়াইখালী, কুমখালী, গাংরখী, বাইনবাড়ি, ফকিরাবাদসহ কয়রা ও চাঁদখালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষের খাওয়ার পানির সবচেয়ে বড় উৎস পুকুর। সাগরের নোনাপানিতে সেই পুকুরগুলো সব ভরে গেছে। ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই গৃহপালিত জীবজন্তুগুলো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
চারটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেলুটি ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, চারটি পোল্ডারের অন্তত ১২টি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ২১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কৃষি, প্রাণী, ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রিমালের প্রভাবে নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বেড়েছে ৫-৬ ফুট। এ কারণে কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ভেঙে ও উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার ও ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এর প্রভাবে পুরো উপজেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। কমপক্ষে ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।