মিলনায়তনের ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কেউ ছিল দাঁড়িয়ে, কেউ–বা মেঝেতে বসে। মজার মজার কথার ফাঁকে চলছিল গান। কারও চোখেমুখে নেই ক্লান্তি বা বিরক্তি। আনন্দ–উচ্ছ্বাসে মেতেছিল কুষ্টিয়ায় এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার সকালে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে তাদের জন্য এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল নয়টায় শিক্ষার্থীদের প্রবেশের কথা থাকলেও সাড়ে আটটার আগেই তারা আসতে শুরু করে। উৎসবে অংশ নিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছিল। ‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয়েছে জিপিএ-৫ উৎসব।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর এলাকা থেকে এসেছিল সাদিয়া আক্তার। সে বলে, সকাল ৮টার পর মিলনায়তনে বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। তার যে প্রত্যাশার ছিল, এর চেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছে।
সকাল নয়টায় আয়োজনের শুরুতে নির্দিষ্ট বুথের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেস্ট ও স্ন্যাক্স সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীরা। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আয়োজনের মূল পর্ব। কুষ্টিয়া বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নাবিলা নূরের উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান। অনুষ্ঠানে জেলার ১০ গুণী শিক্ষককে সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়ার পাশাপাশি উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে একটি করে ফুলগাছের চারা দেওয়া হয়।
সম্মাননা পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাদিরা খানম বলেন, ‘তোমাদের এই সাফল্য ধরে রাখবে। কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না গিয়ে যে যেটায় পারদর্শী সেই লক্ষ্যে পড়াশোনা করবে।’
প্রধান অতিথি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা জামাল বলেন, ‘আজকের এই সংবর্ধনা তোমাদের পুরস্কৃত করার জন্য নয়। তোমাদের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য, দেশ গড়ার দায়িত্ব। তোমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে। মনে রেখো, পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।’
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘প্রথম আলো বাংলাদেশের জয় চায়। সেই জয়ের ভাগীদার, অংশীদার হবে তোমরা। ভালো প্রকৌশলী, ভালো চিকিৎসকের চেয়ে আগে ভালো মানুষ হতে হবে। সেই লক্ষ্য থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে লালনের গান পরিবেশন করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পী সুজন রহমান ও তানিয়া। অতিথি শিল্পী লালনকন্যা শাহরিন সুলতানা পরপর পাঁচটি গান পরিবেশ করেন।
সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার হিসেবে ছিল ক্রেস্ট, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, শিখোর পক্ষ থেকে বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাক্স, সানকুইকের ফ্রুট জুস, প্রথম আলো ই-পেপার (তিন মাস) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, প্রথমা ডটকমে অনলাইনে বই অর্ডারে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কেন্দ্রে প্রথমা প্রকাশন ও প্র-প্রকাশনের প্রকাশিত বইয়ে ৩০ শতাংশ ছাড়, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তার ছয় মাসের প্রিন্ট ভার্সনের সাবস্ক্রিপশনে বিশেষ ছাড়। অনুষ্ঠানের মূল মিলনায়তনের বাইরে অভিভাবকেরা বসে ছিলেন। তাঁরাও বিনা মূল্যে বুধবারের প্রথম আলো পত্রিকা পড়েন।