সিরাজগঞ্জে তাঁত কারখানাগুলোয় ৩ লাখের বেশি তাঁত রয়েছে
সিরাজগঞ্জে তাঁত কারখানাগুলোয় ৩ লাখের বেশি তাঁত রয়েছে

লোডশেডিংয়ের সঙ্গে সুতা ও যন্ত্রাংশের দাম বাড়ায় বিপাকে সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা

লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি কাপড় উৎপাদনে ব্যবহৃত সুতা ও যন্ত্রাংশের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা। এতে তাঁতিদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সে তুলনায় কাপড় বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন না। তাঁতিরা বলছেন, দেড় থেকে দুই মাস ধরে এমন অবস্থা চলছে। এ কারণে জেলার অধিকাংশ তাঁত কারখানাগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে। এরপর আছে শ্রমিকসংকট।

বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, কামারখন্দ, বেলকুচি, এনায়েতপুর, রায়গঞ্জ, চৌহালী ও কাজীপুরে তাঁত কারখানাগুলোয় তিন লাখের বেশি তাঁত আছে। এর সঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ তাঁতি পরিবার জড়িত। এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হয়।

সরেজমিন জেলার বেলকুচি, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার চারটি গ্রামে গিয়ে তাঁতিদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁতিদের অভিযোগ, বর্তমানে ৬০ কাউন্টের প্রতি পাউন্ড সুতা বাজারে ২৯৩ থেকে ২৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই মাস আগে দাম ছিল ২৭৫ থেকে ২৮০ টাকা। এমন ভাবে সব ধরনের সুতার দাম প্রতি পাউন্ডে ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে কোরিয়ান স্যামসাং একটি মাকুর দাম ১ হাজার ৩০০ টাকা। অথচ দেড় মাস আগে এর দাম ছিল ১ হাজার ২০ টাকা। এভাবে তাঁতে ব্যবহৃত চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা প্রতিটি যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে।

বর্তমানে ক্রমাগত লোডশেডিং চলছে। জেনারেটর দিয়ে তাঁত চালাতে গেলে দেখা যায়, ১ লিটার তেলের দাম ১০৬ টাকা। জেনারেটর দিয়ে কাপড় উৎপাদন করতে গেলে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে।

বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের তাঁতি আমিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সুতার বাজারমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে; একই সঙ্গে অব্যাহত লোডশেডিং ও যন্ত্রাংশের দাম বাড়ায় তাঁতে কাপড় উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে। অথচ উত্পাদিত কাপড় হাটে বেশি দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না। এতে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি গ্রামের তাঁতি সোহরাব আলী বলেন, বর্তমানে তাঁতিরা চরম লোকসানে রয়েছেন। এরপরও শ্রমিকের অভাবে কাপড় উৎপাদন করা যাচ্ছে না। শ্রমিকেরা এই কাজে আসে না তার মূল কারণ, মজুরি বাড়াতে বলছেন। কিন্তু বাজারে সুতার যে দাম, তাতে উৎপাদন খরচ উঠছে না। চাহিদার সঙ্গে উত্পাদিত কাপড় হাটে নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন না। শ্রমিকদের মজুরি কীভাবে বাড়াবেন, সে প্রশ্ন রাখেন।

উল্লাপাড়া উপজেলার বালসাবাড়ি গ্রামের আমির হোসেন বলেন, এ শিল্পের ওপর সরকারের কোনো নজর নেই। যে কারণে বর্তমানে তাঁতিদের দুর্দিন চলছে। সরকারের কাছে দাবি, এই তাঁতশিল্পকে বাঁচাতে হলে সুতা, রংসহ তাঁতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের দাম কমাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। অব্যাহত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম অ্যান্ড পাওয়ার লুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মো. বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে নানা অজুহাতে সুতার দাম বাড়ছে। কয়েক দিন পরপরই ব্যবসায়ীরা পাউন্ডপ্রতি সাত থেকে আট টাকা করে দাম বাড়ান। যন্ত্রাংশের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া লোডশেডিং ক্রমাগত চলছে। ইতিমধ্যে জেলার অনেক তাঁত বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই এ শিল্পকে বাঁচাতে লোডশেডিং, সুতা ও যন্ত্রাংশের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।