বরিশালে সংঘবদ্ধ একটি ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের ব্যবহৃত ডেস্কটপ কম্পিউটার, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন ডিভাইসও জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজন হলেন কাওসার খলিফা (২২) ও মাশরাফি হোসেন ওরফে আপন (২১)। ফেসবুক হ্যাকড ও ছবি বিকৃত করে প্রচারের ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তাঁদের পেশা বলে দাবি করেছে পুলিশ।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সগির হোসেন জানান, গতকাল সোমবার বিকেলে বরিশাল নগরের সাগরদি ও সিঅ্যান্ডবি পুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ। আজ মঙ্গলবার তাঁদেরকে আদালতে তুলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ জানায়, গত জুনে বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকার এক তরুণীর ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়। এরপর তাঁর ছবি বিকৃত করে ‘বরিশাল বিবিকিউ’ নামে একটি ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। এরপর ওই পেজের অ্যাডমিনের একজন অনলাইনে ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। অন্যথায় এই ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে (ভাইরাল) দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ওই তরুণী তাঁর ফেসবুক আইডি ফিরে পান এবং ওই বিকৃত ছবি সরিয়ে ফেলে। পরবর্তী সময়ে ওই তরুণী বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ওই জিডির সূত্র ধরে ওই দুই তরুণকে শনাক্ত করে পুলিশ। পরে অভিযান চালিয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁদেরকে আটক করা হয়। পরে ওই তরুণীর জিডিটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে দুই তরুণকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
বরিশাল নগরে কয়েক মাস ধরেই ‘বরিশাল বিবিকিউ’, ‘বিবিকিউ টিভি’, ‘বরিশাল বিবিকিউ–কাপলস দেখলেই ধরায়া দিব’ নামে পেজগুলো আতঙ্ক সৃষ্টি করে আসছিল। এসব পেজের নামে তরুণ-তরুণীদের ফেসবুক আইডি হ্যাকড এবং ছবি বিকৃত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজে সক্রিয় ছিল একটি সংঘবদ্ধ ডিজিটাল অপরাধী চক্র। চক্রটি তরুণ-তরুণীদের ছবি বিকৃত করে কিংবা ছবির সঙ্গে অশ্লীল মন্তব্য জুড়ে দিয়ে প্রথমে নিজেদের পেজে পোস্ট করত। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ দাবি করত, অন্যথায় তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাত। এ বিষয়ে গত তিন মাসে বরিশাল নগরের বিভিন্ন থানায় জিডি করা হলেও পুলিশ চক্রটিকে শনাক্ত করতে পারছিল না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তবে ‘বরিশাল বিবিকিউ’ নামে যে ফেসবুক পেজটি ছিল, সেটি জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে বন্ধ। পরে ‘বিবিকিউ টিভি’ নামে নতুন ফেসবুক পেজ খোলে একই চক্র। সেই পেজেও করা হচ্ছে একের পর এক পোস্ট। উঠতি বয়সীদের ছবি দিয়ে অশ্লীল মন্তব্য জড়িয়ে পোস্ট করা হতো সেই পেজ থেকেও। এর পর আগস্টের শেষ দিকে ‘বরিশাল বিবিকিউ-কাপলস দেখলেই ধরায়া দিব’ নামে আরও একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়। তবে সেই পেজটিও এখন আর সক্রিয় নেই। মূলত চার দিকে সমালোচনার পরই একে একে পেজগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক সগির হোসেন বলেন, কয়েক মাস ধরেই ফেসবুকের এসব পেজ থেকে প্রতারণা করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। এ নিয়ে পাঁচটি জিডি হয়েছে। একের পর এক অভিযোগ আসার পর পুলিশ এর পেছনে সক্রিয় অপরাধী চক্রটিকে খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানের নামে। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় চক্রটির প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর দুজনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা এই অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদেরকে তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। এই চক্রের বাকি সদস্যদেরও গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশাবাদী পুলিশের এই কর্মকর্তা।