সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সিলেট ওসমানী হাসপাতাল

হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আটজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিনজন জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্সসহ আটজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ এবং সরকারি ওষুধ ও চিকিৎসার সরঞ্জাম বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেটে উপসহকারী পরিচালক নিঝুম রায় প্রান্ত বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও দণ্ডবিধি আইনে মামলাটি করা হয়। সিলেটের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ও মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক হাবিবুর রহমান সিদ্দিকের আদালতে পরে মামলাটি দাখিল করা হয়।

মামলায় হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স ইসরাইল আলীকে (সাদেক) প্রধান আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত ইসরাইল আলী হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অন্য আসামিরা হলেন জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স আমিনুল ইসলাম ও সুমন চন্দ্র দেব, হাসপাতালে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী, ওসমানী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসান, হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব, নিরাপত্তা প্রহরী আবদুল জব্বার ও সরদার মো. আবদুল হাকিম। আসামিদের মধ্যে ইসরাইল আলী একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ৯ জানুয়ারি ওই মামলা করে।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা সংঘবদ্ধ দুর্নীতি চক্রের সদস্য। ইসরাইল, রওশন ও জব্বারের কাছে হাসপাতালের শত শত কর্মচারী জিম্মি। তাঁরা হাসপাতালের কর্মচারীদের জিম্মি, প্রতারণা, ঘুষ–বাণিজ্য ও টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ মালিক হয়েছেন। চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। আসামিদের অন্যায়, দুর্নীতি, ঘুষ–বাণিজ্য, অনিয়ম, টাকা আত্মসাতের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে বা আইনের আশ্রয় নিলে আসামিরা হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ওয়ার্ড, কেবিন, বেড, বারান্দা বেড ও উন্নত চিকিৎসা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে রোগী ও তাঁদের অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন আসামিরা। এ ছাড়া রোগীদের অস্ত্রোপচারের সিরিয়াল পাইয়ে দেওয়া ও দ্রুত অস্ত্রোপচার করিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করে রোগী ও তাঁদের অভিভাবকদের কাছ থেকে আসামিরা টাকা নিতেন।

আসামিরা হাসপাতালে প্রতারণা, দুর্নীতি, টাকা আত্মসাৎ, চুরি, বাটপাড়ি, টেন্ডার বাণিজ্য, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, বিনা মূল্যে সরকারি ওষুধ না দিয়ে দালালদের মাধ্যমে বাইরে বিক্রি, ওটি থেকে ওষুধ চুরি করে দালাল দিয়ে বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রি করতেন বলে অভিযোগ আছে। এতে হাসপাতালের সুনাম দিন দিন ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, ইসরাইল জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স হয়েও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী এবং অবৈধভাবে রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন। ক্ষমতার দাপটে কাউকে তোয়াক্কা করেন না। তিনি হাসপাতালের অঘোষিত মালিক ও নিজেকে ‘মুকুটহীন সম্রাট’ মনে করেন। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, যৌন হয়রানি, ভুয়া বিল করে উপপরিচালকের নামে অর্থ আত্মসাৎ, করোনায় নার্সদের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ আছে।

সিলেট শহরে ইসরাইল আলীর নামে ও দখলে ৬ থেকে ৭টি বহুতল ভবন, স্ত্রী-সন্তানদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ আছে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়। এতে আরও বলা হয়, রোগী পরিবহন ও মাদক-আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার জন্য ইসরাইল আলীর নামে-বেনামে ৩৫ থেকে ৪০টি নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স আছে। এসব অ্যাম্বুলেন্সের বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

পুলিশ কনস্টেবল জনী চৌধুরী দীর্ঘ ১০ বছর হাসপাতালে কর্মরত থেকে হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হাসানকে সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজদের চক্রের একজন সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত অন্যরাও একই চক্রের সদস্য হিসেবে হাসপাতালের ভেতরে সব ধরনের অপরাধে জড়িত থেকে অবৈধভাবে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন বলে এজাহারে বলা হয়।