কুড়িগ্রামে উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে হওয়া আকস্মিক বন্যায় তিস্তাপারের চরাঞ্চলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে পলিমাটি ও পাথরের কণাযুক্ত পানির স্রোতে জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর খিতাব খাঁ ও গতিয়াশাম এলাকায় রোপা আমন ধানের খেত নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা ও উলিপুর উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিস্তাপারে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। গতকাল সকাল ৯টার দিকে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে আজ শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে তা কমে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বর্তমানে নদীর পানি স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।
এর আগে বুধবার ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার চার ইউনিয়নে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। তিস্তাতীরবর্তী এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষ যাঁরা বসতভিটা ছেড়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে আকস্মিক বন্যায় চরাঞ্চলের মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রাজারহাট উপজেলার চর খিতাব খাঁ গ্রামের বাসিন্দা নয়ন মিয়া (৩৮) বলেন, ‘বড় বন্যা হবে শুনে চরের দু-একটি পরিবার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। আমরা চরের মানুষ সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। পরে বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে পানি বেড়ে আবার বিকেলে নেমে গেছে। আল্লাহর রহমতে জানমালের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফসলের একটু ক্ষতি হয়েছে।’ এখন মানুষজন স্বস্তিতে চরে অবস্থান করছেন বলে তিনি জানান।
ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, বুধবার বিকেলে প্রশাসনের সতর্কতার মাইকিং শুনে নিচু চরাঞ্চলের কিছু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। তবে সে সংখ্যাটি খুবই কম। গতকাল থেকে পানি কমে যাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষ স্বস্তিতে বাড়িতে অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক আছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের পাহাড়ি ঢলে এবার এত বেশি কাদা আর পাথরকণা ছিল যে ইরি ধানের যে সব খেত তলিয়ে গেছে, সেগুলোর ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পলিমাটি ও পাথরের কণাযুক্ত পানির স্রোতে ধানের শীষ থেকে ধান ঝরে পড়েছে। চর খিতাব খাঁ, গতিয়াশাম এলাকার প্রায় তিন থেকে চার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আরও কয়েক হেক্টর জমির ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে ১০ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে। তবে ৮ অক্টোবরের পর থেকে বৃষ্টিপাত কমে স্বাভাবিক হতে পারে।