কুড়িগ্রামের রৌমারীতে এক শিক্ষককে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনকে (৪০) দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা রৌমারী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ওই নেতার পদ বাতিলের ঘোষণা দেন।
রোকনুজ্জামান উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার উপজেলার চর শৈলমারী ইউনিয়নের ফুলকার চর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুন্নবীকে (৪১) রোকনুজ্জামান মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার বিকেলে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী বাদী হয়ে রোকনুজ্জামানকে আসামি করে মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবু হোরায়রা বলেন, গত বৃহস্পতিবার রোকনুজ্জামান উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। পরে এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের এনে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ করা হয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে শনিবার রাতে রোকনুজ্জামানকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদক পদসহ দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোকনুজ্জামান একজন শিক্ষকের গায়ে হাত তুলেছেন। এটি বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে আমরা দেখছি। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি সুশৃঙ্খল দল। এখনো কোনো নীতি-নৈতিকতাহীন ব্যক্তির জায়গা নেই। যিনি একজন শিক্ষকের গায়ে হাত তোলেন, তাঁর মাধ্যমে দল ও সমাজের কোনো উপকার হবে না। তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের সব পদ-পদবি থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে আজ রোববার সকালে রোকনুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর কোনো সাড়া মেলেনি। কিছু সময় পর তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপকুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রোকনুজ্জামান ও তাঁর সহযোগী আসাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ তাঁদের আটক করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ফুলকার চর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার নুরুন্নবী ও বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুর রশীদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে যান। এ সময় রোকনুজ্জামানের লোকজন নুরুন্নবী ও রশীদকে সেখান থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে রোকনুজ্জামানের মালিকানাধীন পলি এন্টারপ্রাইজের বাস কাউন্টারে নিয়ে আটকে রাখেন। সেখানে নুরুন্নবীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
পরে বিষয়টি সমঝোতার জন্য নুরুন্নবীকে সঙ্গে নিয়ে রোকনুজ্জামান ও তাঁর সঙ্গী মো. আসাদুল ইসলাম (৪৭) সিজি জামান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রার কার্যালয়ে যান। সেখানে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রোকনুজ্জামান উত্তেজিত হয়ে নুরুন্নবীকে কিলঘুষি মারেন। পরে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই নুরুন্নবী রৌমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। গতকাল শনিবার লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।