ভাঙ্গার কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় পুকুরে গোসল করতে যাওয়ার পর এক কিশোরীর ধর্ষণ ও হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনে কাজ করছে পুলিশের পাঁচটি সংস্থা। এ ঘটনায় আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে কিশোরীর মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে ভাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন।

পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, বছরখানেক আগেও ওই কিশোরী একবার ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। ওই সময় তাঁরা থানায় মামলা করেননি। বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসা করে নেন।

লাশ ময়নাতদন্তের জন্য আজ সকালে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তালাত মাহমুদ শাহানশাহ, ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন আল রশিদসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনে ভাঙ্গা থানা-পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুরের সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট, ডিবি (জেলা গোয়েন্দা পুলিশ), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও জেলা বিশেষ শাখা (ডিএসবি) কাজ করছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ওই কিশোরীর বাড়িতে গেলে তার মা ও বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা ন্যায় বিচারের দাবি করেন। কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমি চাইয়েচিন্তে খাই। না পাইলে না খাই। আমার মাকে (মেয়ে) যারা মারছে, তাদের বিচার চাই। আমার মা নাবার (গোসল) গেছে। তারে ধইরা নিয়ে পাটখেতে মাইরা ফ্যালাইছে। আমার মা কাঁঠাল খাইতে পছন্দ করত। শুক্রবার সকালে মার জন্য ভাঙ্গা বাজার থেকে কাঁঠাল কিনে আনছি। কিনা কাঁঠালডা পইড়া রইছে। খাওয়ার মানুষ নাই।’

কিশোরীর মা বলেন, তাঁর স্বামী অসুস্থ। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। কাজ শেষে গতকাল শুক্রবার দুপুরে একটু শুয়েছেন। সেই সময় তাঁর মেয়ে পুকুরে গোসল করতে যায়। গোসল শেষে ভেজা কাপড় সে পুকুরপাড়েই পরিবর্তন করে। ভেজা কাপড় পুকুরঘাটেই পড়ে ছিল। তাঁর মেয়েকে যাঁরা খুন করেছেন, তিনি তাঁদের শাস্তি চান।

ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পরিবারটি হতদরিদ্র। ওই কিশোরীর বাবা গত কয়েক বছর আগে দুর্ঘটনায় আহত হন। তার পর থেকে তেমন কাজকর্ম করতে পারেন না। কিশোরীর মা অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালান। এ দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে নিহত কিশোরী বড়

কিশোরীর মা–বাবা বলেন, গত বছর ওই কিশোরীকে পাশের গ্রামের এক ছেলে ধর্ষণ করেন। ছেলেটি ওই পরিবারের আত্মীয় হওয়ায় পারিবারিকভাবে বিষয়টির মীমাংসা হয়।

ভাঙ্গা থানার ওসি মামুন আল রশিদ বলেন, চার মাস আগে ভাঙ্গা থানায় যোগদান করেছেন তিনি। শুনেছেন, মেয়েটি বছরখানেক আগেও ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। তাঁরা ওই সময় থানায় আসেননি। দুই পরিবার স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করেছিল। এ ঘটনায় ওই ছেলেও তাঁদের সন্দেহের বাইরে নয়।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যাচ্ছে, মেয়েটিকে ধর্ষণ করে সালোয়ার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে। থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশের একাধিক দল তদন্ত করছে। সন্দেহভাজন কেউ যাতে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য ডিবি পুলিশ তৎপর রয়েছে। আশা করছেন, অল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করতে পারবেন।