‘সকালেও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সারি সারি ঘরবাড়ি। ঘরের ভেতরে টিভি, ফ্রিজ, চাল-ডাল, মালামাল। গোয়ালঘরে গরু। সাজানো সংসার। কিন্তু বাজার থেকে ছুটে এসে দেখি, শুধু কালো কালো ছাই। দুই ঘণ্টার আগুন সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে।’
আজ রোববার দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন ছাল্লেক মিয়া (৪০)। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামের মনোয়ার হোসেন ওরফে মনো সাধুর ছেলে। তিনি পেশায় ভ্যানচালক। সকাল ১০টার দিকে তাঁর বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ছাল্লেখসহ অন্তত ১০ জনের বসতবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘরসহ যাবতীয় মালামাল পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় আড়াই লক্ষাধিক টাকার দুটি গরু (ষাঁড়) পুড়ে আহত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের মনোয়ার হোসেন, তাঁর ছেলে হাফিজুল, আবু তালেব, শরিফুল ও ছাল্লেক, মৃত কেসমত আলীর ছেলে শাজাহান, তরিকুল ও বিপুল, তাইজাল শেখের ছেলে মাসুদ এবং মনোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুস সালাম। তাঁরা পেশায় কৃষক, ভ্যানচালক ও বেসরকারি চাকরিজীবী। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা দাবি করছেন, গোয়ালঘরের ছাই থেকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এতে ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। গরু দুটি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস জানায়, প্রথমে মনোয়ারের ছেলে হাফিজুলের গোয়ালঘরে আগুন লাগে। এরপর আস্তে আস্তে ১০ জনের বসতবাড়ি, গোয়াল ও রান্নাঘরে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় মানুষ ও শৈলকুপা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে আটজনের বসতবাড়ি, রান্নাঘর ও গোয়ালঘর এবং ঘরে থাকা সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ ছাড়া আরও দুজনের বসতঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে এবং দুটি গরু পুড়ে আহত হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সবকিছু হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আটজনের বসতঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘর এবং যাবতীয় মালামাল পুড়ে গেছে। আহত একটি গরু পরিবহনে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে।
এ সময় কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষক মনোয়ার হোসেনের (৮০) সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর আর কিছুই নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাঁর ভাষ্য, গোয়ালঘরের ছাই তাঁদের সর্বস্বান্ত করেছে। ধান, চাল, টিভি, ফ্রিজ, আসবাবসহ তাঁর পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মনোয়ারের ভ্যানচালক ছেলে হাফিজুল বলেন, তাঁর গোয়ালঘরের ছাই থেকেই আগুন লাগে। প্রথমে তাঁর গোয়াল, তারপর একে একে ১০টি বাড়িতে আগুন লেগে। এতে তাঁর দুটি গরু, বসতবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘরসহ মালামাল পুড়ে প্রায় ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মৃত কেসমত আলীর ছেলে বিপুল হোসেন বলেন, তিনি একটি ভেটেরিনারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। আগুনে তাঁর ঘরে থাকা কোম্পানির ওষুধ, টাকা, আসবাব পুড়ে গেছে। তাঁর সাত লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান বলেন, তাঁর বাড়ি পাশেই এ অগ্নিকাণ্ড ঘটনা। শত শত গ্রামবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে ৮-১০টি পরিবারের সবকিছু পুড়ে ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির ধারণা করা হচ্ছে।
শৈলকুপা ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুতের শর্টসার্কিট বা গোয়ালঘরের ছাইয়ের আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে বলা যাবে।