জামালপুরের নরুন্দি রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে আটক ছয় কিশোর টাকার বিনিময়ে মারপিট করতে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে জামালপুরে গিয়েছিল। মুক্তাগাছার এক তরুণের পক্ষে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার ছয়জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তাঁদের একজনের বয়স ১৫ বছর। অন্য সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন মারুফ হোসেন (১৮), রাকিব হোসেন (২০), রাকিব হাসান (১৮), মো. শিহাব উদ্দিন (১৮) ও শাকিল আহম্মেদ (১৮)। তাঁদের সবার বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটি পূর্বপাড়া এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে ময়মনসিংহের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থী বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পূর্বশত্রুতার জেরে ওই শিক্ষার্থীকে মারতে ময়মনসিংহ রেলস্টেশন থেকে দেশি অস্ত্র নিয়ে ট্রেনে ওঠেন ছয়জন। তাঁরা জামালপুরের পিয়ারপুর রেলস্টেশনে গিয়ে বিভিন্ন বগিতে ওই শিক্ষার্থীকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁকে পেয়ে মারধর করতে থাকেন। তখন তাঁকে ট্রেন থেকে নামানোর চেষ্টা করলে অন্য যাত্রীরা বাধা দেন। সুযোগ বুঝে ওই শিক্ষার্থী ট্রেনে লুকিয়ে পড়েন। পরে নরুন্দি রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতির সময় ছয়জন তাঁকে খুঁজতে থাকেন। না পেয়ে সহায়তা করা যাত্রীদের ওপর হামলা করেন। পরে নরুন্দি রেলস্টেশনে স্থানীয় লোকজন তাঁদের আটক করে পুলিশ দেন।
আজ শনিবার বিকেলে তারাটি পূর্বপাড়া গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসী ও গ্রেপ্তার কিশোরদের স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। এলাকাবাসী জানান, গতকাল শুক্রবার রাতেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার বিষয়টি জানতে পারেন। এর পর থেকে গ্রামে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ ঘটনায় কেউ কেউ বিস্মিত হয়েছেন।
তারাটি পূর্বপাড়ার রফিজ উদ্দিন বলেন, আটক কিশোরদের কয়েকজন স্কুলে পড়ে। কয়েকজন পড়াশোনা করে না। তারা মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের একটা অংশের রাজনীতিতে ঢোকার চেষ্টা করত। তবে কেউ রাজনীতিতে পরিচিত নয়। কিশোরদের নামে আগে কোনো মামলা নেই।
আটক ছয়জনের মধ্যে সবার ছোট রফিক (ডাকনাম) দশম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা এ বিষয়ে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই বলে জানান। ওই কিশোরের চাচাতো ভাই বলেন, তারাটি গ্রামে মাসুম নামের এক তরুণের হয়ে টাকার বিনিময়ে আরেকজনকে তারা মারতে গিয়েছিল। মাসুম কিশোরগঞ্জে পড়ে। মেসে থাকা নিয়ে তার সঙ্গে জামালপুরের এক শিক্ষার্থীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ জন্য মাসুম ছয়জনকে নিয়ে ট্রেনে ওই তরুণকে মারতে যায়। মাসুম ঘটনার সময় ছয়জনকে রেখে পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, আটক ছয়জনের কারও বাবা কৃষক, কেউ আবার শ্রমিক। সন্তানদের এমন খবর পাওয়ার পর তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। সন্তানদের মুক্তির জন্য আজ অনেকে জামালপুরে গেছেন। ওই কিশোররা এ ঘটনার আগে এমন কোনো অপরাধে যুক্ত ছিল না বলে জানান।