ফেনীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু। ১ অক্টোবর থেকে ইউনিসেফের উদ্যোগে ২০ শয্যার ওই তাঁবুতে স্থাপিত আলাদা একটি ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম শুরু হয়। তাঁবুতে এখন ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছে।
গতকাল শনিবার থেকে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৫২ জন শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। আজ সকালে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২০ শয্যার তাঁবুতে স্থাপিত ওয়ার্ডে সব কটি শয্যায় শিশুরা ভর্তি রয়েছে।
তাঁবু ওয়ার্ডের প্রতিটি শয্যার পাশেই একটি করে স্ট্যান্ড ফ্যান, একটি করে স্যালাইন স্ট্যান্ড ও একটি করে রোগীদের ওষুধ রাখার ছোট ক্যাবিনেট রয়েছে। কথা হয় আলাউদ্দিন নামের একজন রোগীর স্বজনের সঙ্গে। তিনি তার ১০ মাস বয়সী মেয়ে সাফওয়ানকে গত শুক্রবার সকালে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, মেয়ের অবস্থা এখন অনেকটা উন্নতির দিকে। তাঁবু হলেও এখানে খুব সুন্দর পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসা চলছে।
মিজানুর রহমান নামে আরেকজন অভিভাবক জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর এক বছর বয়সী ছেলে আবদুল্যাহকে ভর্তি করেন। এরই মধ্যে সে সুস্থ হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল থেকে স্যালাইনসহ ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার পর থেকে ডায়রিয়া পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। বন্যার পানিতে ফেনী সদর হাসপাতালের নিচ তলা ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় হাসপাতালের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়। তখন ডায়রিয়া পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটে। শিশু থেকে বৃদ্ধ অনেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভিড় জমান। দিনে গড়ে ২৫০-৩০০ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। অনেক রোগীকে হাসপাতালের বারান্দা ছাড়াও বাইরে গাছের নিচে বসেও চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। এ নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। এর পর ইউনিসেফের পক্ষ থেকে হাসপাতাল অভ্যন্তরে তাঁবু স্থাপন করে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২০ শয্যার একটি ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইউনিসেফের নজরে পড়ে বিষয়টি। হাসপাতালের পুরোনো ভবনের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনেই খালি জায়গায় স্থান নির্ধারণ করা হয়। পরে সেখানে বালু দিয়ে ভরাটের পর স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগ মেঝে পাকা করে দেয়। সেখানে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের তাঁবু স্থাপন করা হয়।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসিফ ইকবাল জানান, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্য শয্যা বরাদ্দ মাত্র ১৮টি। অথচ ভর্তি করতে বা চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে শতাধিক রোগীকে। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্যই নতুন ওয়ার্ডটি চালু করা হয়েছে। এখনো প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তবে সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডায়রিয়া আক্রান্তের হার কিছুটা কম।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, ইউনিসেফের সহায়তায় স্থাপিত তাঁবুতে শিশুদের জন্য আলাদাভাবে ২০ শয্যার একটি ওয়ার্ড চালু করা অত্যন্ত সময় উপযোগী হয়েছে। যদিও হাসপাতালে চিকিৎসক ও সেবিকা স্বল্পতা রয়েছে তবুও এ পৃথক ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন গড়ে ফেনী সদর হাসপাতালে শিশুসহ শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি থাকেন। ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এ তাবুটি এখানে থেকে যাবে। তাঁবুতে ইপিআই ক্যাম্পসহ বিভিন্ন রকম সেবা কার্যক্রম চলবে। এ ছাড়া বিশেষ জরুরি সেবাও সেখানে দেওয়া হবে। এ ধরনের তাঁবু স্থাপন করে দেওয়ার জন্য তিনি ইউনিসেফ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।