মাদারীপুরে দর-কষাকষি করে দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ১০ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের মাদারীপুর সার্কেল কার্যালয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-২) রফিকুল ইসলাম ও (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীর কার্যালয়ে বসে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন।
ফাঁস হওয়া ভিডিওর শুরুতে এক ব্যবসায়ীর উদ্দেশে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এইডা কী আনছেন?’ পরে ৫০০ টাকার কয়েকটি নোট গুনে পকেটে ভরেন রফিকুল। এরপর রাজস্ব কর্মকর্তা রফিকুল বলেন, ‘কী যে করেন আপনারা? মানে...মাদারীপুরের লোক এত ধনী, দেশের মধ্যে তৃতীয় ধনী জেলা। আপনারা কেন এমন করেন?’
একপর্যায়ে ব্যবসায়ীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যা দিছেন, আমি এটা নিতে পারব না। এটা ইমরান সাহেবকে কি দেব? আমি কীভাবে বোঝাব? স্যারে তো বকব! আমি এটা নিতে পারব না। এই তিন (তিন হাজার) আমি নিতে পারব না। বাকিটা কখন দেবেন? আপনারা স্যারকে বলে যান, দেখা করে যান। কারণ, তিনি (ইমরান) আপনার অরিজিনাল স্যার। সে–ই আপনাকে বাঁচাতে পারব, মারতে পারব। বুঝছেন!’
শেষ কথায় রফিকুল ওই ব্যবসায়ীকে বলেন, ‘প্রতি মাসে অফিস খরচ এক হাজার টাকা দিয়ে যাবেন। এটা যেন আর না বলা লাগে। কথা যেন নড়চড় না হয়। মাসের ১০ তারিখের মধ্যে টাকা আমার কাছে দিয়ে যাবেন।’
ভিডিওটির ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড পরে দেখা যায় রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীরকে। তিনি ওই ব্যবসায়ীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার দোকানের আশপাশে যারা দিচ্ছে, ওয়েল অ্যান্ড গুড। আর যারা দিচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আপনার নম্বর দিয়ে যান।’ পরে ওই ব্যবসায়ী এক হাজার টাকা ইমরান কবীরের টেবিলে রাখলে তিনি টাকাটা গ্রহণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা ওই ব্যবসায়ীর নাম অমিত হাসান। তিনি মাদারীপুর পুরান বাজারের ব্যবসায়ী। জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছোট পোশাকের দোকান। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভ্যাট দিতে বলেন স্যাররা। পরে অফিসে গেলে তাঁরা এক হাজার টাকায় ভ্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু শর্ত হলো, প্রতি মাসে অফিসে তিন হাজার টাকা দিতে হবে।’
ভিডিও সম্পর্কে মো. ইমরান কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের নয়, এটি সাজানো। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নাই।’
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ী আমার কাছে আসার পর তাঁকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে বলেছিলাম। তাঁর কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করা হয়নি।’ ঘুষ দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কথোপকথনগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ।’
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের মাদারীপুর সার্কেল কার্যালয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনারা তো আসছিলেন, নিউজ করে দেন। অসুবিধা নাই।’ এ কথা বলেই তিনি কল কেটে দেন।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের ভিডিওটি আমি দেখেছি। পুরো ঘটনা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’