স্বাভাবিকভাবে তরমুজের মৌসুম শেষ হয়েছে আগেই। এখন মৌসুম নয়, তারপরও খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের বড়বাড়ি গ্রাম, বাগালী ইউনিয়নের উলা ও বগার বিলের মাছের ঘেরে একই সঙ্গে দেখা মিলছে মাছ চাষ আর তরমুজের আবাদ। গাছে ঝুলে থাকা ফলগুলো দূর থেকে লাউ বা কুমড়া মনে হলেও কাছে গেলে বোঝা যায়, মাছের ঘেরের ওপর মাচায় ঝুলছে পরিপক্ব তরমুজ। ঘেরের মাচায় অসময়ের এই তরমুজ কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
কয়রা উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের কৃষক আবুল হাসান বলেন, তাঁর সাড়ে ছয় বিঘা জমির মাছের ঘেরের পাড় বা আল আছে ২৫ শতাংশ। সারা বছরই ঘেরপাড় আনাবাদি পড়ে থাকত। কৃষি গবেষণা বিভাগের পরামর্শে গত জুন মাসে প্রথমবারের মতো মাছের ঘেরের পাড়ে বারি তরমুজ-২ জাতের ২০০টি তরমুজের বীজ রোপণ করেছিলেন। তরমুজগাছের বয়স তিন মাস পেরিয়েছে। রোগবালাই হয়নি, ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তরমুজের ওজন ৫ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। ৩০ হাজার টাকা খরচ করে এরই মধ্যে ৮০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদ হাসান জানান, বেশ আগে তরমুজের মৌসুম শেষ হয়েছে। অসময়ে কয়রা উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১৩০ বিঘা মাছের ঘেরের পাড়ে ২০ জন কৃষককে দিয়ে মাচান পদ্ধতিতে বারি তরমুজ-১, বারি তরমুজ-২ ও হাইব্রিড তরমুজ চাষ করিয়েছেন তাঁরা। ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩৫ মেট্রিক টন। কৃষকদের বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
আজ কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা ও বগা গ্রামের বিলে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি মাছের ঘেরের ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচায় তরমুজগাছের লতাগুলো বেড়ে উঠেছে। মাচার নিচে সারি সারি তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজগুলো নেটের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। তরমুজের গায়ে ডোরাকাটা দাগ ও রং কালচে সবুজ।
কয়রার বগা গ্রামের কৃষক ফেরদৌস হোসেন বলেন, অসময়ে তরমুজ চাষের মতো লাভজনক ফসল আর নেই। আগে তিনি ঘেরের আলে বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ করলেও এই প্রথম অসময়ে তরমুজ চাষ করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ অসময়ে তরমুজের চাষ দেখতে আসছেন। জানতে চাচ্ছেন, কীভাবে বীজ পেলেন, কীভাবে রোপণ করলন, কীভাবে যত্ন নিলেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৯০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। আশা করছেন আরও ৪০ হাজার টাকার মতো তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন।
কৃষি গবেষণা বিভাগ খুলনার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ নিয়ে গবেষণা করে গত বছরই প্রথম কয়রায় পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য এসেছিল। এই দুই জাতের তরমুজের বীজ কৃষকেরাই সংরক্ষণ করতে পারেন। একটি জাতের তরমুজের ভেতর হলুদ, অন্যটির টকটকে লাল। সারা বছরই চাষ করা যায়। রোপণের ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি করা যায়। কয়রার আবহাওয়া জন্য উপযোগী এই দুই জাত। এগুলোর ফলন, আকৃতি, স্বাদ ও মিষ্টতা অনেক ভালো।