যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

চাকরিপ্রার্থীদের অপহরণ ও আবাসিক হলের (ছাত্রাবাস) এক শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে রাতভর নির্যাতনের ঘটনায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ৯ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ৯ জনের পাশাপাশি বর্তমানে ছাত্রত্ব না থাকা আরও ৪ জনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শাস্তিপ্রাপ্তদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানাও আছেন। ছাত্রত্ব না থাকায় তাঁকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রশাসন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলনকক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে ২২ জুন প্রথম আলোর শেষের পাতায় ‘ছাত্রলীগের দৌরাত্মে অসহায় প্রশাসন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, গত দুই বছরে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী ও সাংবাদিক নির্যাতনের অন্তত পাঁচটি অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠন করলেও পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের অনেকে ভার্চ্যুয়ালি ও সশরীর সভায় অংশ নেন। অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর তা নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ডিসিপ্লিনারি কমিটির সুপারিশ রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উপস্থাপন করার পর তা ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রিজেন্ট বোর্ডের সভায় গত বছরের ৭ ডিসেম্বর লিফট অপারেটর পদে চাকরিপ্রার্থীদের অপহরণের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন, ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী জি এম রাইসুল হক, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগের শিক্ষার্থী নৃপেন্দ্র নাথ রায়, মুশফিকুর রহমান, ফাহিম ফয়সাল ও মো. আবু বক্কারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের মধ্যে ফাহিম ফয়সালের বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই। তাঁর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও আবাসিক হলে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ৪ জুন দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৬ নম্বর কক্ষে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিন রহমানকে রাতভর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা, রেদওয়ান আহমেদ জিসান, মো. বিপুল সেখ, ইছাদ হোসেন, মো. আশিকুজ্জামান (লিমন) ও মো. আমিনুল ইসলাম; ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মো. বেলাল হোসেন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মো. রায়হান রহমান রাব্বীকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সোহেল রানা, ইছাদ হোসেন ও আশিকুজ্জামানের বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও আবাসিক হলে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। বেলাল হোসেনকে চাকরিপ্রার্থীদের অপহরণের ঘটনাতেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রিজেন্ট বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনিছুর রহমান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) খালেদা আক্তার, যুগ্ম সচিব মোর্শেদা আক্তার, যশোরের আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাওছার উদ্দিন আহম্মদসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।