দুই বছরের বেশি সময় আগে কোলের সন্তানকে ফেলে কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হন সীমা আক্তার। এ সময়ের মধ্যে তাঁর কোনো ধরনের খবর পায়নি পরিবার। দীর্ঘ সময় পর মায়ের কোল ফিরে পেয়েছে শিশুটি। ভারতের কারাগারে প্রায় দুই বছর সাজা ভোগের পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরেন সীমা। ফিরে দুই হাত দিয়ে পরম আদরে জড়িয়ে নেন নিজের পাঁচ বছর বয়সী শিশুটিকে।
সীমা আক্তার (২৩) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ভূঁইয়াপাড়ার বাসিন্দা। ২০২২ সালের মার্চ মাসে কাজের সন্ধানে দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে ভারতে যান তিনি। সেখানে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন তিনি।
গতকাল দুপুরে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশি সহকারী হাইকমিশনের মাধ্যমে আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় সীমান্তের শূন্যরেখায় সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা (কনস্যুলেট) ওমর শরীফ, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. খাইরুল আলম, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, আখাউড়া আইসিপি ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার রুহুল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের মাটিতে ফেরার সুযোগ পেয়ে সীমা আক্তার সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। এরপর তিনি বলেন, ভারতের পারলারের কাজের কথা বলে এক বান্ধবী তাঁকে সেখানে পাঠান। সিরাজগঞ্জ থেকে বাসে করে ফেনী পর্যন্ত যাত্রায় সীমার সঙ্গেই ছিলেন ওই বান্ধবী। পরে রাতের বেলায় এক দালাল তাঁকে অবৈধ পথে কাঁটাতারের বেড়া পার করে ভারতীয় এক দালালের হাতে দিয়ে চলে যান। সেখান থেকে তাঁকে আগরতলা বিমানবন্দর নিয়ে ব্যাঙ্গালুরুর একটি বিমান টিকিট দিয়ে ভারতীয় দালাল সটকে পড়েন। বিমানবন্দরের ভেতরেই ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক হন তিনি।
সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা (কনস্যুলেট) ওমর শরীফ জানান, অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে দেশটির আদালত সীমাকে দুই বছরের সাজা দেন। সাজা শেষে তাঁকে আগরতলার নরসিংগড় ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়।
সীমা আরও বলেন, ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রায় আড়াই বছর পর পরিবার ও সন্তানের কাছে ফিরতে পেরেছেন। তিনি ত্রিপুরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানান।
এদিকে সীমাকে ফিরে পেয়ে বেশ খুশি তাঁর মা ঝর্ণা খাতুন। তিনি জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে নাতিকে রেখে কাজের জন্য ঢাকা যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেড় হয়েছিলেন সীমা। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আট মাস আগে থানা-পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে ভারতের একটি জেলে আছেন।