শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠন

সহশিক্ষায়ও আলো ছড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

সিলেটের সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে—এমন প্রায় ২০০ সংগঠন আছে।

সিলেটের সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি আলো ছড়াচ্ছেন বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে। পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তোলার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া ও সাংগঠনিক বিষয়েও অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন শিক্ষার্থীরা। সিলেটের সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন প্রায় ২০০ সংগঠন আছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সংগঠনগুলো সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে মানবসেবামূলক কাজের পাশাপাশি প্রাণীর অধিকার ও সেবামূলক কাজ করে থাকে। অসংখ্য সংগঠন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। সিলেটের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক সংগঠন আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি এসব উন্নয়নমূলক সহশিক্ষা কার্যক্রমেও অনুপ্রাণিত করে থাকে।

কবিতাচর্চা ও সাহিত্য আড্ডার জন্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাভৈঃ আবৃত্তি সংসদ ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাহিত্য ও কবিতাচর্চার মাধ্যমে সমাজের অসংগতিপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরে প্রতিবাদ করার চেষ্টা হয় এই সংগঠনের মাধ্যমে। এ ছাড়া সংগঠনটি শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা করে থাকে। সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে পরিবেশনা করে।

মাভৈঃ আবৃত্তি সংসদের সভাপতি শাহরিয়ার আফরিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিচালিত সংগঠনটি প্রতি মাসে “প্রজাপতি” নামের একটি মাসিক ম্যাগাজিন প্রকাশ করে থাকে। এতে সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের লেখা কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্প ছাপিয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশনের পাশাপাশি নিজস্ব মৌলিক প্রযোজনা মঞ্চায়ন করে। বর্তমানে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৫০ জন। কার্যনির্বাহী কমিটিতে আছেন আরও ২০ জন। সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংগঠনিক ও সৃজনশীলতা বিকশিত হয়। আমরা সব সময়ই চাই কবিতাকে ধারণ করতে, কবিতার মাধ্যমে সত্যকে উপস্থাপন করতে।’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬০টি সংগঠন আছে। সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীরাই পরিচালনা করেন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সৃজনশীল কাজে সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে অবদান রাখছেন।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীদের অধিকার ও তথ্য সংরক্ষণে ‘প্রাধিকার’ নামের সংগঠনের যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালে। শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সংগঠনটি বিভিন্ন সময় বন্য প্রাণী উদ্ধার থেকে শুরু করে জনসাধারণকে সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে থাকে। এর মধ্যে বেওয়ারিশ কুকুরদের র‌্যাবিস টিকা দেওয়া, পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাস তৈরি করাসহ বন্য পাণী উদ্ধার করে সেবা দিয়ে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো কাজ করে সংগঠনটি। যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক প্রাণী উদ্ধার ও সেবা দিয়েছে সংগঠনটি।

প্রাধিকারের সাধারণ সম্পাদক আরিজ আহম্মেদ বলেন, সংগঠনের সদস্যরা সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বন্য প্রাণী আটকের খবর পেলে ছুটে যান। সেখান থেকে প্রাণী উদ্ধারের পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির কাজ করে থাকেন। তিনি বলেন, ‘গেল বন্যায় সংগঠনের সদস্যরা সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৬০০ প্রাণী উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়েছেন, নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় কোনো প্রাণী আটক হলে অধিকাংশ সময়ই আমাদের কাছে খবর পৌঁছানো হয়। আমরা চাই বোবা প্রাণীদের কণ্ঠ হতে।’

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মাহফুজুর রব প্রথম আলোকে বলেন, সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ২০টির মতো সংগঠন আছে। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৫টি সংগঠন সক্রিয়। সংগঠনগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে।

সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটিতে সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে শিক্ষার্থীদের এমন ১৭টি সংগঠন আছে। এর মধ্যে অন্যতম লিডিং ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাব একটি। এটি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে। এ ছাড়া মহানগর এলাকায় জরুরি রক্তের প্রয়োজনে সংগঠনের সদস্যদের কাছে খবর পৌঁছালে এগিয়ে যায় তারা।

সংগঠনের সভাপতি আহমদ শরীফ বলেন, সংগঠনটি ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে সংগঠনের ১৫ জনের কার্যনির্বাহী সদস্যসহ ১২০ জন সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। এই ক্লাবের লক্ষ্য হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিতদের শিক্ষা ও উন্নত জীবনযাত্রার পথকে সুগম করা। সংগঠনের সদস্যরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সপ্তাহে পাঁচ দিন দুটি শিশুর পরিবারে গিয়ে একাডেমিক শিক্ষা প্রদান করে থাকে। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ইফতারের আয়োজন এবং ঈদের উপহারসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজও করে তারা। সদস্যদের চাঁদার পাশাপাশি বছরে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এ জন্য চলচ্চিত্র উৎসব, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন করা হয়ে থাকে।

সিলেটের আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন ১০টি সংগঠন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (জনসংযোগ) মো. শাহান আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও উৎসাহিত করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।