সুনামগঞ্জে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুরমা নদীর পানি আবারও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত দুই দিন হাওর ও নদীতে পানি বাড়ে। এ কারণে নতুন করে আবারও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে, ভোগান্তি বেড়েছে মানুষের।
তাহিরপুরে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে বেশি। আজ শুক্রবার সকালে ঢলের পানিতে উপজেলার আনোয়ারপুর থেকে উপজেলা সদর সড়কের চিকসা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর আগে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের আনোয়ারপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা ও দুর্গাপুর এলাকা প্লাবিত হয়। এই সড়ক দিয়ে প্রায় এক মাস সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে। প্লাবিত স্থানে নৌকায় পারাপার হচ্ছেন লোকজন।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীতীরবর্তী মল্লিকপুর, বড়পাড়া, তেঘরিয়া, উত্তর আরপিননগর, ষোলঘর, ফিরোজপুর এলাকার রাস্তাঘাট ও কিছু ঘরবাড়ি আবার প্লাবিত হয়েছে। শহরে কালীপুর, শান্তিবাগ এলাকা থেকে বন্যার পানি নামেনি এখনো।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি কমতে শুরু করে ১ জুলাই থেকে। ৪ জুলাই সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামে। তবে নদী ও হাওরে পানি কমে ধীরে। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরে পানি ছিল। গত মঙ্গলবার সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। এরপর ওই দিন রাত থেকে আবার সুনামগঞ্জে ও এর উজানে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি হয়। এ কারণে পাহাড়ি ঢল নেমে নদীর পানি বাড়তে থাকে।
পাউবোর তথ্যমতে, আজ দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই সময়ে ছাতক উপজেলা শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ১৫৫ মিলিমিটার। একই সময়ে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৬০ মিলিমিটার।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন জানান, গত বুধবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। এ কারণে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার বাদাঘাট-তাহিরপুর, তারিহপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক আবার প্লাবিত হয়েছে। আবার পানি বাড়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গণি (৬০) বলেন, ‘পানি তো এবার যেতেই চাচ্ছে না। কিছু কমে, আবার বাড়ে। গত এক মাস এভাবেই চলছে।’
সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল খয়ের (৪৫) জানান, তাঁদের এলাকার ঘরবাড়িতে আবার পানি ঢুকছে। এলাকার প্রধান সড়ক থেকে পানি নামতেই পারেনি। এখন আবার পানি বেড়ে গেছে। জেলা সদরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন লোকজন।
বন্যায় তো আমরার সর্বনাশ করি দিছে। ঘরও খানি নাই, কাম নাই। ইভাবে টানা বইন্যা অইলে ত আমরা শেষ অইজিমু।সুলতান মিয়া, সদর উপজেলার নীলপুর গ্রামের বাসিন্দা
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার জামালগঞ্জ, শান্তিগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা উপজেলায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখন আবার ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি বাড়ছে।
সদর উপজেলার নীলপুর গ্রামের বাসিন্দা সুলতান মিয়া (৭০) বলেন, ‘বন্যায় তো আমরার সর্বনাশ করি দিছে। ঘরও খানি নাই, কাম নাই। ইভাবে টানা বইন্যা অইলে ত আমরা শেষ অইজিমু।’ একই গ্রামের আমির আলী (৩৪) বলেন, ‘একবার কিছু চাউল সাহায্য পাইছলাম। আর কোনো কিছু খেউ দিছে না। সাহায্য দরকার।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেছেন, উজানের ঢল নামছে, একই সঙ্গে ভারী বৃষ্টিও হচ্ছে। তাই পানি আরও বাড়তে পারে। তবে বড় বন্যার হবে না। ভারী বৃষ্টি না হলে পানি কমবে।