সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ আজ বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে সোমালিয়ার উপকূল থেকে সাত নটিক্যাল মাইল (১ নটিক্যাল মাইল সমান ১ দশমিক ৮৫২ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছিল। সেখানে জাহাজটি নোঙর করে রেখেছে দস্যুরা। লন্ডন ও কুয়ালালামপুরভিত্তিক জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) থেকে তথ্য নিয়ে আজ রাত পৌনে আটটার দিকে জাহাজটির সর্বশেষ অবস্থানের তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন জানান, জাহাজটি স্থলভাগ থেকে সাত নটিক্যাল মাইল দূরে উপকূলে এনে আবার নোঙর করা হয়েছে। দস্যুরা এখন পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবি করেনি। সমুদ্রগামী জাহাজের অবস্থান পর্যবেক্ষণকারী ‘শিপফিক্স’-এর ওয়েবসাইটেও দেখা যায়, সোমালিয়ার উপকূলের কাছে অবস্থান করছে জাহাজটি।
সাহ্রি ও ইফতারের খাবার পাচ্ছেন নাবিকেরা
এদিকে জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে জলদস্যুরা দুর্ব্যবহার করেনি বলে জানা গেছে। তাঁদের সাহ্রি ও ইফতারের সময় খাবার দেওয়া হচ্ছে। আজ দুপুরে পরিবারের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন নাবিক আসিফুর রহমান। তিনি বলেছেন, জলদস্যুরা এখন পর্যন্ত খারাপ আচরণ করেনি। তাঁরা অক্ষত আছেন।
বার্তা পাঠানোর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন আসিফুর রহমানের বাবা মো. আক্তার উদ্দিন ও বড় ভাই আতিকুর রহমান। বার্তার বিষয়ে তাঁরা বলেন, এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূলে নোঙর করেছে। তাঁদের সময়মতো খেতে দেওয়া হচ্ছে। বড় কোনো সমস্যা এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। এর বেশি কিছু বলেননি আসিফুর।
এর আগে গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি কবির গ্রুপের সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লিমিটেডের।
জলদস্যুরা জাহাজে উঠছেন, এমন একটি ভিডিও সেদিন সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেন আসিফুর রহমান। ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, একজন সোমালিয়ার জলদস্যু দড়ি বেয়ে জাহাজে উঠছে। তার কাছে অস্ত্র ছিল।
আসিফুরদের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। ছেলে জিম্মি হওয়ার পর থেকে আসিফুরের মা নাসরিন আক্তার ও বাবা মো. আক্তার উদ্দিনের দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। আজ মুঠোফোনে আসিফুরের বাবা আক্তার উদ্দিনের কণ্ঠে সেই উদ্বেগটাই ফুটে উঠল। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। সবার জন্য দোয়া করবেন।’