‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় কয়েকজন আন্দোলনকারীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় কয়েকজন আন্দোলনকারীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বুধবার দুপুরে ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে

বরিশালে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ থেকে আটক ১৩ জনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ

‘আমাদের কর্মসূচি ছিল পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ। আমরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করিনি, উসকানি দিইনি। তারপরও পুলিশ আমাদের ওপর কেন বিনা উসকানিতে লাঠিপেটা করল? টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে গেল।’ থানায় তিন ঘণ্টা আটক থাকার পর মুক্তি পেয়ে এসব কথা বলছিলেন বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী লামিয়া সাইমুন। তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর কমিটির দপ্তর সম্পাদক।

লামিয়া জানান, তাঁর সঙ্গে আরও দুই ছাত্রীকে পুলিশ আটক করেছিল। তাঁরা হলেন একই কলেজের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অর্পিতা ও সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রী তানসিন আক্তার। তাঁরাও পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হওয়ার পর আটক হয়েছিলেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বাসদের বরিশাল জেলা কমিটির সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী এই তিনজনকে থানা থেকে নিজ জিম্মায় নেন। পরে তাঁদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

বরিশালে আজ বেলা ১১টার পর বিএম কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নগরের সদর রোডে জড়ো হন। তাঁরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় শিক্ষার্থী হত্যার বিচার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মুক্তি, গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি, হয়রানি বন্ধসহ ৯ দফা দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে বাদানুবাদ ও ধস্তাধস্তি হয়। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে ৪ সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।

পরে শিক্ষার্থীরা নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকায় জেলা জজ আদালতের সামনে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখানেও পুলিশ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকলেও পুলিশ আবার লাঠিপেটা করে। এ সময় কয়েকজন ছাত্রী সড়কে বসে প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন পুলিশ ওই এলাকা থেকে ১০ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

লামিয়া বলেন, ‘পুলিশের লাঠিপেটায় আমার কাঁধ ও ডান হাতে আঘাত পেয়েছি। বাকি দুই ছাত্রীও গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এ অবস্থায় আমরা তিন ঘণ্টার বেশি সময় থানায় আটক ছিলাম।’

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কথা বলার সময় ওই তিন ছাত্রী বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক্স-রে করাচ্ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বাসদের নেতা মনীষা চক্রবর্তী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ন্যক্কারজনক, নিন্দনীয়। কিন্তু বরিশালে আজ নারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুরুষ পুলিশ সদস্যরা যে ন্যক্কারজনকভাবে লাঠিপেটা করল এবং টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে থানায় নিল, তা সারা দেশে পুলিশের যে অপেশাদার আচরণ তারই বহিঃপ্রকাশ। এ ঘটনা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, অগ্রহণযোগ্যও।’

পুলিশ জানায়, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিক্ষোভ চলাকালে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। তাঁদের সবাইকে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিচুল হক বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আটক শিক্ষার্থীদের সবাইকে তাঁদের অভিভাবকদের ডেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।